২৯ কর্মকর্তার চাকরি থেকে অব্যাহতির আবেদন, খতিয়ে দেখছে মন্ত্রণালয়

June 20 2020, 16:04

২৯ জন পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা (মাস্টাররুল) একসঙ্গে চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেছেন। গত ২৬ মে পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেন তারা। এ পরিপেক্ষিতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পাট অধিদপ্তর থেকে ৩ জুন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

পাট অধিদপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর বসে নেই মন্ত্রণালয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখাসহ খুব শিগগিরই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাট মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ শীর্ষক প্রকল্পের ২৯ জেলায় দায়িত্ব পালনকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তারা দায়িত্ব হতে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেছেন। তারা হলেন- আলমগীর হোসেন (পঞ্চগড়), শেখ মাহাবুব উল ইসলাম (মাগুরা), এটিএম তৈবুর রহমান (কুড়িগ্রাম), জাহাঙ্গীর তালুকদার (জামালপুর), আইয়ুব আলী (শেরপুর), জিয়াউর রহমান খান (সিরাজগঞ্জ), অসীম কুমার মালাকার (ঠাকুরগাঁও), আকরাম হোসেন (কিশোরগঞ্জ), নাজমুল আলম চৌধুরী (নেত্রকোনা), এ কে এম মাহবুব আলম বিশ্বাস (রংপুর), দিলীপ কুমার মালাকার (দিনাজপুর), আব্দুল জলিল (চাঁদপুর), শংকর রঞ্জন সরকার (গোপালগঞ্জ), জাকির হোসেন জুয়েল (যশোর)।

আবদুল হালিম (বগুড়া), ওয়াহিদুজ্জামান খান (টাঙ্গাইল), মামুনার রশিদ (পাবনা), আ কা ম হারুন অর রশিদ (সাতক্ষীরা), আব্দুস সাত্তার মিয়া (লালমনিরহাট), আলমগীর হোসেন (শরীয়তপুর), আখতারুজ্জামান (নওগাঁ), অজিত কুমার রায় (রাজশাহী), আব্দুল আউয়াল সরকার (নীলফামারী), মো. আতাউর রহমান নোমানী (মানিকগঞ্জ), আজমত আলী আকন্দ রেজাউল (ময়মনসিংহ), সুদীপ কুমার দে (চুয়াডাঙ্গা), আব্দুর রহিম সিদ্দিকী (নরসিংদী), উজল কান্তি বড়াল (চাপাইনবাবগঞ্জ), হাফিজ উদ্দিন (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)।

পাট অধিদপ্তর থেকে মন্ত্রণালয় পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে করোনার দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী কৃষি উৎপাদন যাতে কোনভাবে ব্যাহত না হয় সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন। এ প্রেক্ষাপটে পাট উৎপাদন যাতে কোনভাবে ব্যাহত না হয় সে বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে। প্রকল্পের আওতায় কৃষি উপকরণ বিতরণে যাতে কোনও অনিয়ম না হয় সে লক্ষ্যে প্রকল্পভুক্ত ৪৫ জেলার জেলা প্রশাসককে পত্র দেওয়া হয়েছে।

তদারকি মনিটরিংয়ের সুবিধার্থে যেসব পাটচাষীকে বীজ বিতরণ করা হয়েছে এবং সার বিতরণ করা হচ্ছে বা হবে তাদের তালিকা চেয়ে গত ২৮ মে প্রকল্প পরিচালক চিঠি দেওয়া হয়। উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে পাটচাষীদের ডাটাবেজ তৈরি করা। কিন্তু বারবার তাগাদা দেওয়া সত্বেও প্রকল্পের দুই বছর পার হয়ে গেলেও ডাটাবেজ তৈরির কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকার উপকরণ বিতরণ এবং চাষী প্রশিক্ষণ সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তা যাচাই-বাছাই করা কঠিন হয়ে পড়েছে। যেসব অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে ও সুষ্ঠুভাবে স্বচ্ছ্বতার সাথে নিস্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছে না।

চিঠিতে বলা হয়, স্বচ্ছ্বতার জন্য প্রকল্প পরিচালক এবং সংশ্লিষ্টদের কাছে পাটচাষীর তালিকা চাওয়া হয়। কিন্তু প্রকল্প অফিসে ২৯ পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা বর্ণিত চিঠিপত্রের কারণে অসন্তুষ্ট হয়ে একযোগে দায়িত্ব হতে অব্যাহতির আবেদন করেন, যা প্রচলিত সরকারি চাকরির বিধিবিধান পরিপন্থি।

পাট অধিদপ্তরের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, তারা দীর্ঘদিন বিভিন্ন পদে চাকরি করলেও স্থায়ী না হওয়ায় ক্ষোভ থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। এরকম আরো অনেকে কর্মকর্তা আছেন তারা বিভিন্ন প্রজেক্টে মাস্টাররুলে কাজ করছেন। বিষয়টি সুরাহার জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তারা

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিন চাকরি করার পর অস্থায়ী থেকে স্থায়ী না হওয়ার কষ্ট থেকে তারা অব্যাহতি চেয়েছেন। তাদের চাকরির ধারাবাহিকতা নিয়ে সমস্যার কারণে নিয়মিতকরণ করাও সম্ভব হয়নি। তবে এটা ষড়যন্ত্র কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মন্ত্রীর নেতৃত্বে খুব শিগগিরই বসে সিদ্ধান্ত হবে।

পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সওদাগর মুস্তাফিজুর রহমান এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাদের কোনও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈকত চন্দ্র হালদার বলেন, স্যারের সঙ্গে (বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী) আলাপ করে এ বিষয়ে জানানো হবে।