স্পেনে জরুরি অবস্থা, ফ্রান্স-ইতালিতে কড়াকড়ি
ইউরোপে আবার প্রবলভাবে ফিরে এসেছে করোনা। যার জেরে একের পর এক দেশে কড়াক়ড়ি শুরু হয়ে গেছে। এর মধ্যে স্পেনে আবার জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে। ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ বাদ দিয়ে দেশের সর্বত্র জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
ছয় জনের বেশি লোকের জমায়েত হতে পারবে না। রাত ১১টা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত কারফিউ থাকবে। অভ্যন্তরীণ সীমানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ”ইউরোপে আবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে। এটা বাস্তবতা। এক ভয়ঙ্কর সময়ে আমরা আছি। গত ৫০ বছরে কখনো এমন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়নি।”
গত রোববার স্পেনের আঞ্চলিক সরকারের প্রধানরা একজোট হয়ে জাতীয় সরকারের হাতে অভূতপূর্ব ক্ষমতা তুলে দিয়েছে। এমনকী, সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক স্বাধীনতাকেও কাটছাঁট করতে পারবে সরকার। ফ্রান্সের মতো কার্ফিউয়ের সময় আরো এগিয়ে ৯টা থেকে করার কথা ভাবা হচ্ছে। স্পেনে এখনো পর্যন্ত ১০ লাখেরও বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
ফ্রান্সে করোনা দ্রুত ছড়াচ্ছে
গত ২৪ ঘণ্টায় ফ্রন্সে ৫২ হাজার জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত কয়েক সপ্তাহে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। ফ্রান্সের অধিকাংশ শহরেই তাই কড়াকড়ি ফিরে এসেছে। খুব জরুরি দরকার না থাকলে রাতে কাউকে বেরতে দেয়া হচ্ছে না।
জার্মানিতে প্রতিবাদ
করোনার কড়াকড়ি নিয়ে রোববার বার্লিনে আবার বিক্ষোভ দেখালেন হাজার দুয়েক মানুষ। বিক্ষোভের মোকাবিলা করতে জার্মান পুলিশ ৬০০ জন অফিসার মোতায়েন করেছিল। পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা মুখে মাস্কও লাগাননি। সামাজিক দূরত্বও বজায় ছিল না। অনেক বিক্ষোভকারীর হাতে ছিল গোলাপী বেলুন। তারা চিৎকার করে বলছিলেন, ”আমাদের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হচ্ছে। সে জন্যই আমরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছি।
বার্লিনে করোনার প্রকোপ বাড়ছে। এক লাখ মানুষ পিছু ১১৭ জন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
ইতালিতেও কড়াকড়ি
ইতালিতেও করোনা নিয়ে কড়াকড়ি শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, সব বার ও রেস্তোরাঁ সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে বন্ধ করে দিতে হবে। যাবতীয় ট্রেড ফেয়ার ও কনফারেন্স বাতিল করে দেয়া হয়েছে। স্কুলের অন্তত ৭৫ শতাংশ ছাত্রছাত্রী বাড়িতে থেকে অনলাইনে ক্লাস করছে। সরকারি তরফে বলা হয়েছে, নভেম্বর মাসটা কড়াকড়ির মধ্যে থাকলে ডিসেম্বরে বড়দিনের আগে ছাড় দেয়া হতে পারে।
ভ্যাকসিন ন্যাশনালিজম
সাবধান করে দিলেন জার্মানির প্রেসিডেন্ট। বার্লিনে ওয়ার্ল্ড হেলথ সামিটে তিনি নতুন একটি শব্দবন্ধ চালু করেছেন। ‘ভ্যাকসিন ন্যাশনালিজম’ বা ‘ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ’। তার সাফ কথা, বিশ্বজুড়ে সমস্ত দেশের করোনা রুখতে সহয়োগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া উচিত। তা না করে ভ্যাকসিন নিয়ে যদি স্বার্থপর নীতি নেয়া হয়, জাতীয়তাবাদী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তা হলে বিপদ।
তিনি বলেছেন, করোনার হাত থেকে কেউই নিরাপদ নয়। এমনকী তারাও নয়, যারা নিজেদের দেশের সীমার মধ্যে করোনাকে বেঁধে রাখতে পেরেছেন। কারণ, তারা নিজেদের সীমায় বন্দি। যতক্ষণ সব দেশ, সব মানুষ করোনাকে হারাতে না পারবে, ততদিন বিপদ থাকবেই। তাই একে অন্যের বিরোধ করে নয়, সহযোগিতা করলেই গোটা পৃথিবী বাঁচবে। সেখানে ভ্যাকসিন ন্যাশনালিজমের স্থান নেই।
সূত্র : ডয়চে ভেলে