সহিংসতা বাড়ছে সিটি নির্বাচনে

January 27 2020, 02:28

নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে সহিংসতাও তত ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। প্রতিদিনই ঢাকার দুই সিটির কোথাও না কোথাও সহিংস ঘটনা ঘটছে। আর সহিংসতা রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে। কোথাও কোথাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে দলপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। ক্ষমতাসীনদের পক্ষাবলম্বনেরও অভিযোগ মিলছে। তবে ঢাকা মহানগর পুলিশ বলছে, পুলিশ নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।

ঢাকার দুই সিটিতেই নির্বাচনী সহিংসতা নিয়ে সাধারণ মানুষ এখন রীতিমতো ভীতসন্ত্রস্ত। আর নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে সহিংসতাও ততই ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। আর এর সাথে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। গত ২১ জানুয়ারি রাজধানীর মিরপুরের আনন্দনগর তেলের মিল এলাকায় ঢাকা উত্তর সিটির বিএনপি সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালের প্রচারণায় হামলা চালায় সরকার সমর্থকরা। স্থানীয় ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মুজিব সরোয়ার মাসুমের নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ আছে। এই ঘটনায় তাবিথ আউয়ালসহ অনেকেই আহত হন। যার মধ্যে মিডিয়া কর্মীরাও ছিলেন।
গত ২৪ জানুয়ারি কামরাঙ্গীরচরে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইদুর রহমান রতনের প্রচারণায় হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ আছে। দুই দফায় চালানো এই হামলায় সরকার সমর্থিত প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা অংশ নেন। ইসলাম চেয়ারম্যান বাড়ির মোড়ে রতনের নিজ বাসার নির্বাচনী ক্যাম্পেও হামলা চালানো হয় বলে জানা যায়।

দক্ষিণ সিটির ১৩, ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী তাসলিমা পারভীন কল্পনা জানিয়েছেন, তার নির্বাচনী পোস্টার ও ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। রাতে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর লোকজন এ কাজ করছে। সন্ত্রাসীরা তার পোস্টার-ব্যানার লাগাতে বাধার সৃষ্টি করছে।

গতকাল রাজধানীর সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের সামনে দক্ষিণ সিটির মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা চালায় যুবলীগ। ইশরাক ওই এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা শেষে গোপীবাগের বাসায় ফিরছিলেন। মুহূর্তে এই হামলা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষ গোপীবাগ হুমায়ুন সাহেবের রেলগেট থেকে শুরু করে আরকে মিশন রোড পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা বলেছেন, তারা বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শুনতে পান। পরে পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থল থেকে তারা ছয় রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করেছে। ঢাকার এক শীর্ষ সন্ত্রাসী এই হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় সাংবাদিকসহ অনেকেই আহত হয়েছেন। স্থানীয় সিদ্দিকুর রহমান নামের এক ব্যক্তি জানান, এত দিন শুধু সংঘর্ষের কথাই শুনেছেন। কিন্তু সেসব ঘটনায় অস্ত্রের ব্যবহার হয়নি। গতকাল ইশরাকের ওপর হামলার ঘটনায় অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে। এটা খুবই আতঙ্কের। সংঘর্ষের এই ঘটনায় অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকার বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বলেছেন, তারা আতঙ্কিত। যে কারণে কোনো কোনো এলাকায় তাদের কোনো প্রচার-প্রচারণাও নেই। ভয়ে তারা রাস্তায় নামতে পারছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রার্থী বলেন, পুলিশ সরকার সমর্থক প্রার্থীর পক্ষেই কথা বলছেন। মোহাম্মদপুর এলাকার এক কাউন্সিলর প্রার্থীর বাবা গতকাল বলেছেন, ভোটের দিন তাদের কর্মী-সমর্থকরা রাস্তায় নামতে পারবেন কি না তাই নিয়ে শঙ্কিত তারা। ইতোমধ্যে কয়েক দফায় তারা আক্রমণের শিকার হয়েছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে তাদের মধ্যে শঙ্কাও বাড়ছে।
পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। গতকালও ইশরাকের নির্বাচনী প্রচারণায় হামলার ঘটনার পর উপস্থিত ইশরাক সমর্থকরা বলেছেন, তাদের ওপর যখন হামলার ঘটনা ঘটে তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যকে আশপাশে তারা দেখতে পাননি। সংঘর্ষ যখন ব্যাপক আকার ধারণ করে তখন পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। তাবিথের ওপর হামলার পর তাবিথের কর্মী-সমর্থকরা অভিযোগ করেন, পুলিশের চোখের সামনেই মেয়রপ্রার্থী তাবিথের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।

এই অভিযোগের ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেন, পুলিশ নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট যাবে অনুষ্ঠিত হয় তার জন্য পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।