সন্তান কোলে সাঁতরে উঠেও বাঁচাতে পারলেন না বাবা-মা
রাজশাহী নগরীর শ্রীরামপুর এলাকায় জেলা প্রশাসকের (ডিসি) বাংলো সংলগ্ন পদ্মা নদীতে ৩৬ জন যাত্রী নিয়ে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে পদ্মানদীতে উত্তাল ঢেউয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
রাত ১১টা পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ১৩ জনকে জীবিত ও এক শিশু কন্যাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। মৃত শিশুর নাম মরিয়ম (৬)। সে বসুয়া এলাকার রতনের মেয়ে। বাকি ২২জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজদের সন্ধানে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।
স্থানীয় সূত্র জানায়, রাজশাহীর পবা উপজেলার চরখিদিরপুর এলাকার ইনসার আলীর ছেলে রুমন আলীর (২৬) সঙ্গে একই উপজেলার ডাঙেরহাট এলাকার শাহীন আলীর মেয়ে সুইটি খাতুনের বিয়ে হয় গত বৃহস্পতিবার। বিয়ের পর ওই দিনই বরের বাড়িতে নেওয়া হয় কনেকে। শুক্রবার বরের বাড়ি থেকে বর-কনেকে নিয়ে আসছিলেন কনেপক্ষ। ফিরতি পথে দুর্ঘটনার শিকার হয় কনে যাত্রীবাহী নৌকা। এতে নিখোঁজ রয়েছেন বর-কনেও।
তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পর নিখোঁজ বর সাঁতরে কিনারে উঠতে সক্ষম হয়েছেন। তবে ফায়ার সার্ভিস ও প্রশাসনের তরফ থেকে বর উদ্ধারের তথ্য নিশ্চিত করা হয়নি।
রাজশাহী সদর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা আব্দুর রউফ সাংবাদিকদের জানান, দুটি নৌকায় ৩৬ জনের মতো যাত্রী ছিলেন। এর মধ্যে ১৩ জনকে জীবিত ও এক শিশু কন্যাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। জীবিতদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মৃত শিশুকেও সেখানে রাখা হয়েছে। এছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন এখনও ২২ জন।
তিনি আরো বলেন, ঘটনার পর নৌকার মাঝি খাদিমুল ইসলাম (২৩), আরোহী রতন আলী (২৮) ও তার স্ত্রী বৃষ্টি খাতুন (২২), সুমন আলী (২৮) ও তার স্ত্রী নাসরিন বেগম (২২) এবং মেয়ে সুমনা আক্তার (৬) তীরে উঠে আসেন। তবে রতন ও তার স্ত্রী বৃষ্টি খাতুন জীবিত উদ্ধার হলেও তাদের মেয়ে মরিয়ম খাতুনের মৃত্যু হয়। হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সন্তানকে আঁকড়ে ধরে সাঁতরে তীরে উঠেন এই দম্পতি। নিখোঁদের মধ্যে ৭-৮ জন শিশুও আছে। দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন স্টেশন কর্মকর্তা আব্দুর রউফ।
নৌকাডুবির পর আশপাশের অসংখ্য মানুষ এবং স্বজনরা শ্রীরামপুর এলাকায় নদীপাড়ে ভিড় করেছেন। রয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারাও। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল নদীতে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিজিবি সদস্যরাও স্পিডবোট নিয়ে নদীতে ভাসমান মানুষ খুঁজছে। নদীপাড়ে প্রস্তুত রয়েছে অ্যাম্বুলেন্স।