শ্রীলঙ্কার সেনাপ্রধান যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ, কড়া প্রতিবাদ কলম্বোর

February 17 2020, 03:52

শ্রীলঙ্কার সেনা কমান্ডার লে. জেনারেল শাভেন্দ্র সিলভা ও তার পরিবারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মার্কিন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ‘কড়া আপত্তি’ জানানোর পর রোববার শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আলিয়ানা বি তেপলিজকে তলব করেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ সময় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিনেশ গুনাবর্ধনে মার্কিন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে শ্রীলঙ্কার আপত্তির কথা জানিয়ে বলেন যে ‘অযাচাইকৃত তথ্যের’ ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেইও শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনীর বর্তমান প্রধান ও ভারপ্রাপ্ত চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল সিলভাকে নিষিদ্ধ করার কথা জানিয়ে বলেন, ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনীর ৫৮তম ডিভিশনের মাধ্যমে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন তথা বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কমান্ড রেসপনসিবিলিটিতে তার সম্পৃক্ত থাকার বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
পম্পেইওর ঘোষণাটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে বলা হয় যে পররাষ্ট্র দফতরের ধারা ৭০৩১ (সি) অনুযায়ী এই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কিন দূতকে বলেন যে জেনারেল সিলভার সিনিয়রিটি বিবেচনায় নিয়ে রাষ্ট্রপ্রধান তাকে সেনাপ্রধান পদে নিযুক্ত করেছেন। আর তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণিত কোনো অভিযোগ নেই।
প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসা তাকে ওই পদে নিয়োগ করেন। তিনি শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীর সামরিক অফিসাদের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র। শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ অবসানে যেসব সামরিক কর্মকর্তা বিপুল অবদান রেখেছিলেন, তিনি তাদের অন্যতম।

জাতীয় নিরাপত্তার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি তদারকিতে প্রমাণিত অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এক ব্যক্তিতে গণতান্ত্রিকভাবে নিযুক্ত প্রেসিডেন্টের নিযুক্তি নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করায় লঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হতাশা প্রকাশ করেন।
মন্ত্রী মার্কিন সিদ্ধান্তকে যুক্তরাষ্ট্র-শ্রীলঙ্কা সম্পর্কে অপ্রয়োজনীয়ভাবে জটিলতা সৃষ্টিকারী হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা তথ্যের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। বরং অত্যন্ত বিতর্কিত ২০১৫ সালের ওআইএসএল প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
তথ্যের উৎস যাচাই করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন যে ওআইএসএল তদন্ত ছিল মানবাধিকারবিষয়ক তদন্ত, এটি অপরাধীবিষয়ক তদন্ত ছিল না।
তিনি বলেন, এ কারণে চেইন অব কমান্ডের বর্ণনা কোনোভাবেই অপরাধমূলক দায়দায়িত্বের সাথে সম্পৃক্ত হয় না। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত অপরাধমূলক দায়দায়িত্ব আদালতের মাধ্যমে ফয়সালা করা হয়।
তিনি সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করার জন্য মার্কিন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রদূত তেপলিজ বলেন, তিনি শ্রীলঙ্কা সরকারের বার্তা ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছে দেবেন। তিনি আরো জানান, শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা নিয়ে দেশটির সাথে চলমান সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্র যখন শ্রীলঙ্কা সরকারের সাথে মিলিনিয়াম চ্যালেঞ্জ কোঅপারেশন কমপ্যাক্ট (এমসিসি) ও স্ট্যাটাস অব ফোর্সেস (সোফা) চুক্তি সই করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তখন যুক্তরাষ্ট্র এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। দুটি কারণে এই বিশেষ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকতে পারে। হয় শ্রীলঙ্কা যাতে নতজানু হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হতে বাধ্য হয় কিংবা শ্রীলঙ্কা এই দুই চুক্তির কোনোটিই করবে না, সে ব্যাপারে জানতে পেরেই প্রতিশোধমূলকভাবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

শ্রীলঙ্কার বর্তমান সেনাপ্রধানকে শ্রীলঙ্কার সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় তথা সিংহলি বৌদ্ধরা বীর হিসেবে মনে করে। তিনি তামিল টাইগারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ে বিপুল অবদান রাখেন। যুক্তরাষ্ট্র এলটিটিইকে সন্ত্রাসী সংগঠন মনে করে। ২০০৯ সালে সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের পরিণামে প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সাথে শ্রীলঙ্কার সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হতে পারে।