শোষণের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ছিলেন মওলানা ভাসানী

November 17 2020, 06:32

বাঙালির ইতিহাসকে স্মরণ করতে হলে যে দুজন মানুষের অবদান সবার আগে স্মরণ করতে হবে তারা হলেন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই দুইজন ব্যক্তি ছাড়া বাঙালির ইতিহাস যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

বঙ্গবন্ধুর অগ্রজ মওলানা ভাসানী ছিলেন অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। তার ব্যক্তি জীবন, সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি কোনো বিষয়েই অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। শোষণের বিরুদ্ধে সবসময় হুঙ্কার দিয়েছেন সিংহের মতো। অসাম্প্রদায়িক জাতি গঠনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছেন তিনি। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, খেলাফত আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে মওলানা ভাসানী ছিলেন রক্ত চক্ষুর ন্যায়। এই উপমহাদেশে ব্রিটিশ আধিপত্যকে মেনে নিতে পারেননি, পাকিস্তানের তাঁবেদারিও মেনে নেননি।

মওলানা ভাসানী ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম তৃণমূল রাজনীতিবিদ আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ১৯৪৭-এ সৃষ্ট পাকিস্তান ও ১৯৭১-এ প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। দেশের মানুষের কাছে ‘মজলুম জননেতা’ হিসেবে সমধিক পরিচিত। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট গঠনকারী প্রধান নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। রাজনৈতিক জীবনের বেশিরভাগ মানুষের অধিকারের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার অনুসারীদের অনেকে ‘লাল মওলানা’ নামেও ডাকতেন।

দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে সোচ্চার এই নেতাকে বিভিন্ন ইস্যুতে বহুবার কারাবরণ করতে হয়েছে। তার একমাত্র অপরাধ ছিল অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা, অত্যাচারীর বিপক্ষে হুঙ্কার দিয়ে গর্জে ওঠা। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। ধর্ম নিয়ে কটূক্তি, বাড়াবাড়ি মোটেও পছন্দ করতেন না। জাতির ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতেন বেশি। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখার সবটুকু চেষ্টা করেছেন। তিনি গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের সংমিশ্রণে অসাম্প্রদায়িক জাতি গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন।

মওলানা ভাসানী ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৭২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সাপ্তাহিক হক কথা প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ ভারত মৈত্রী চুক্তির বিরোধিতা করলেও মুজিব সরকারের জাতীয়করণ নীতি ও ১৯৭২-এর সংবিধানের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন।

তিনি ১৯৭৩ সালে খাদ্যের দাবিতে ঢাকায় ১৫-২২ মে পর্যন্ত অনশন ধর্মঘট পালন করেন। ১৯৭৪ সালের ৮ এপ্রিল হুকুমতে রাব্বানিয়া সমিতি গঠন করেন। একই বছর জুন মাসে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করলে টাঙ্গাইলের সন্তোষে গৃহবন্দি হন। ১৯৭৬-এর ১৬ মে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে ঐতিহাসিক লং মার্চে নেতৃত্ব দেন। একই বছর ২ অক্টোবর খোদাই খিদমতগার নামে নতুন আর একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।

আজ ১৭ নভেম্বর মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। আজকের এই দিনে বীর পুরুষ মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী পরলোকগমন করেন। অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর এই কিংবদন্তিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। বাঙালি জাতির জন্য তার ত্যাগের কথা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ইতিহাসের মানদণ্ডে মওলানা ভাসানী ছিলেন, আছেন ও থাকবেন চিরকাল।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।