লাদাখে আবারও অনুপ্রবেশের চেষ্টা চীনের, বৈঠকে ভারত

September 02 2020, 05:07

প্রায় দেড় মাস শান্তিপূর্ণ অবস্থার পর আবারও লাদাখ সীমান্তে মুখোমুখি ভারত ও চীনের সেনারা। একটি সূত্রের দাবি, পরিস্থিতি এমন যে পরস্পরকে নিশানা করে বসে রয়েছে দু’দেশের ট্যাঙ্কবাহিনী।

আনন্দবাজার জানায়, বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) নজিরবিহীন ভাবেই ভারতের বিরুদ্ধে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘন করে অনুপ্রবেশের অভিযোগে সরব হয়েছে চীন।

এ যাবৎ আন্তর্জাতিক মহলে চীনের আগ্রাসনের কথাই বলে এসেছে ভারত, এ বার উল্টো ভারতের বিরুদ্ধেই অভিযোগ তুলেছে চীন।

বুধবার প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারতের দিকের চুমার এলাকায় চীনা সেনারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে। তবে ভারতীয় সেনারা তা প্রতিহত করেছে।

সূত্রের দাবি, চীনের চেপুজি ক্যাম্প থেকে ৭-৮টি গাড়ি বের হতে দেখে ভারতীয় সেনারা সতর্ক হয়ে যায়। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখাজুড়ে সেনা সমাবেশ করে ভারত। সেই তৎপরতা দেখে চীনের সেনারা ক্যাম্পে ফিরে যায়।

গত ২৯ আগস্ট রাতে প্যাংগং লেকের দক্ষিণ প্রান্তে বিনা প্ররোচনায় স্থিতিশীল অবস্থা বদলে দেওয়ার চেষ্টা করে চীন, যা ভারতীয় সেনাদের তৎপরতায় ভেস্তে যায়। ভারতীয় সেনাদের দাপটে পিছু হটতে বাধ্য হয় চীনা সেনারা।

প্রতিরক্ষা সূত্রের মতে, লাল ফৌজ গত এপ্রিল-মে মাসে যে জায়গাগুলো দখল করে ঘাঁটি গেড়েছিল, তার কয়েক কিলোমিটার এলাকা ফের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়েছে ভারত। এমনকি কালা টপের মতো গুরুত্বপূর্ণ পাহাড় চূড়া দখল করতে সক্ষম হয়েছে ভারতীয় সেনারা। ওই উচ্চতা থেকে ভারতীয় সেনাদের গতিবিধি লক্ষ করার জন্য যে ক্যামেরা ও নজরদারি যন্ত্র বসানো হয়েছিল, সেগুলোও নষ্ট করে দেওয়া হয়। ওই চূড়া নিয়ন্ত্রণে নেওয়ায় সেখান থেকে চীনা সেনাদের ওপর এখন নজর রাখতে পারছে ভারতীয় সেনারা। এতে অস্বস্তিতে রয়েছে বেইজিং।

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, মঙ্গলবারের (১ সেপ্টেম্বর) পর বুধবার লাদাখের চুসুলে হওয়া ব্রিগেড কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠকে দর কষাকষির প্রশ্নে কিছুটা হলেও সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে ভারত। ঠিক যেভাবে এত দিন ভারতের জমি দখল করে দর কষাকষিতে এগিয়ে থেকেছে চীন। ধারণা করা হচ্ছে, এ যাত্রায় দখল করা এলাকা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় হতাশা থেকেই কূটনৈতিক সমঝোতার দোহাই দিচ্ছে চীন।

বুধবার লাদাখের পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে বসেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াত, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, সেনাপ্রধান এম এম নরবণে।

সূত্রের মতে, শীত শুরু হওয়ার আগে চীনের সেনারা যেভাবে নতুন করে আগ্রাসী মনোভাব দেখাতে শুরু করেছে, কীভাবে তা প্রতিহত করা যায়, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী কয়েক দিনের মধ্যে লাদাখে যেতে পারেন বলে জানা গেছে।

এদিকে, লাদাখে ভারতীয় সেনাদের গতিবিধি দেখে সরব হয়েছে দিল্লিতে নিযুক্ত চীনা দূতাবাস। গত ৩১ আগস্ট রাতে ভারতীয় সেনারা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে বলে দাবি করেন চীনের মুখপাত্র জি রং।

তিনি জানান, সীমান্ত সমঝোতা ভেঙে ভারতীয় সেনারা প্যাংগং লেকের দক্ষিণে রেকিং পাসের কাছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে। ফলে সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। তার দাবি, ভারতের ওই গতিবিধির ফলে চীনের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ হয়েছে এবং সীমান্ত এলাকার শান্তি নষ্ট হয়েছে। চীনের মুখপাত্রের মতে, যে সেনারা অনুপ্রবেশ করেছে, পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আগে তাদের প্রত্যাহার করে নিক ভারত।

জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, শনিবার মধ্যরাতে চীনা সেনাদের এলাকা দখলের চেষ্টা ভেস্তে দেওয়া হয়। গত ৩১ আগস্ট সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে চুসুলে যখন বৈঠক চলছে, সেসময় আবারও এলাকা দখলের চেষ্টা করে চীনের সেনারা। কিন্তু ভারতীয় সেনারা তৎপরতার সঙ্গে স্থিতিশীলতা ভাঙার চেষ্টা আটকে দেয়।

সামরিক ও কূটনৈতিক স্তরে বিষয়টি নিয়ে চীনের কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারত। চীনা সেনারা ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের আচরণ না করে, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।