রাতে চীন থেকে ফিরছেন বাংলাদেশীরা, দেখা করতে পারবেন না স্বজনরা

January 31 2020, 16:07

চীন থেকে ফিরে আসা বাংলাদেশী নাগরিকদের ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশে আশকোনা হজ ক্যাম্পে ‘বিচ্ছিন্ন’ করে (কোয়ারেন্টাইন) রাখা হচ্ছে। চীনের হোবেই প্রদেশের উহান থেকে আগত ৩৬১ জন নাগরিক সেখানে এতোদিন নিজ নিজ বাসস্থানে বন্দী অবস্থায় ছিলেন। তাদের আনা হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থাপনায়। বাংলাদেশী নাগরিকেরা আশকোনা হজ ক্যাম্পে অবস্থানকালীন তাদের খাবার, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসাসহ দৈনন্দিন সকল প্রয়োজনীয় সামগ্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হবে। তাদের নিরাপত্তায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ দল সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে।

এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যে জরুরী অবস্থা জারি করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, অনেক নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের শনাক্ত করা এবং আক্রান্ত ব্যক্তিকে দেখভাল করা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। ফলে এসব দেশে করোনা ভাইরাসটি অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং কিছু সময়ের জন্য বিষয়টি নজরে নাও পড়তে পারে। ইতোমধ্যে চীনের ১০ হাজারের বেশি মানুষ নতুন ধরনের এই ভাইরাসে (২০১৯এনসিওভি) আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ২১৩ জনের বেশি।

উহান থেকে ফিরছেন পিএইচডি গবেষক ইমশিয়াত শরীফ। তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, ‘সুনশান নিস্তব্ধ অন্ধকারময় শহর উহান থেকে ফিরছি। টানা আট দিন অবরুদ্ধ থাকার পর অবশেষে ফিরছি আজ রাতে নিজের দেশে মাটিতে। শুকরিয়া আদায় করছি আল্লাহর প্রতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা ও অশেষ কৃতজ্ঞতা। তিনি আটকে পড়া বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের মনে স্বস্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন।’ ‘ইমশিয়াত শরীফ একই সাথে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন চীন সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। চীন সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের নিয়মিত খোঁজ-খবর রেখেছেন এবং সহযোগিতা করেছেন বলে।

ইমশিয়াত শরীফ বলেন, করোনা ভাইরাসটি দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে আমাদের বাংলাদেশীদের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ বাড়ছিল। অবশেষে দেশে ফিরে যাবার সংবাদে স্বস্তি এনে দিল সকলের মধ্যে।’

এদিকে, চীন থেকে বাংলাদেশী নাগরিকদের দেশে ফিরে আসা এবং প্রত্যাবর্তন পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। শুক্রবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয় । এতে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। উপস্থিত ছিলেন পররাষ্টমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিনিধি।

ফিরে আসা বাংলাদেশী নাগরিকরা পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত আশকোনা হজ্জ্ব ক্যাম্পে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকবেন। এই অবস্থায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের যৌথ মেডিকেল টিম নিয়মিতভাবে বাংলাদেশী নাগরিকদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ফলোআপসহ স্বান্থ্য সেবায় নিয়োজিত থাকবেন।

চীন থেকে ফিরে আসা বাংলাদেশী নাগরিকদের অভিভাবক ও পবিরারের সদস্যবৃন্দকে আতঙ্কিত না হওয়ার এবং বিমানবন্দর ও আশকোনা হজ্জ্ব ক্যাম্প এলাকায় অবস্থান না করার অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। আশকোনা হজ্জ্ব ক্যাম্পে অবস্থানকালীণ সময়েচীন থেকে ফিরে আসা বাংলাদেশী নাগরিকদের স্বাস্থ্যগত তথ্য তাদের অভিভাবক ও পবিরারের সদস্যবৃন্দকে নিয়মিতভাবে অবহিত করা হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক স্বাস্থ্যে জরুরী অবস্থা জারির পেছনে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, নতুন এই ভাইরাসটি নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে ছড়িয়ে পড়লে এটা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। তবে বিশ্ব এখনো পর্যায়ে আসেনি। আক্রান্ত হওয়ার ৯৯ শতাংশই ঘটেছে চীনে। ডব্লিউএইচও এতোটুকু নিশ্চিত যে চীন সেখানকার এই প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। বৈশ্বিক জরুরী অবস্থা ঘোষণার মাধ্যমে ডব্লিউএইচও নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোয় তাদের নজরদারি চালাতে পারবে। এটা এজন্য করা হয়েছে যেন ওই সব দেশের রোগ নির্ণয় করার পদ্ধতি জোরদার করা যায় এবং এ ধরণের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় তাদের প্রস্তুত করা যায়।