রাতারাতি কোটিপতি কাউন্সিলর রাজিবের স্বজনেরাও
গত চার বছরে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন কাউন্সিলর রাজিবের আত্মীয়স্বজনরাও। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ নানা অপরাধে জড়ানোর অভিযোগও রয়েছে। সব কিছুর মূলেই রয়েছে কাউন্সিলর রাজিবের না।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কাউন্সিলর রাজিবের কাছের লোকজন এবং আত্মীয়স্বজনও সন্ত্রাসের রাজত্ব চালিয়ে আসছেন। অভিযোগ রয়েছে, রাজিবের শ্যালক একরাম এবং চাচা ইয়াসিন বিভিন্ন হাউজিংসহ নানা জায়গায় গিয়ে জায়গা জমিসংক্রান্ত ব্যাপারে জবরদস্তি করে আসছিলেন। কেউ নিজের জমির উপর কাজ করতে গেলে সেখানে গিয়ে বাধা দিতেন একরাম ও ইয়াসিন। পরে কাউন্সিলর নিজেই ঝামেলা মেটানোর নামে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিতেন। শুধু তাই নয়, রহিম ব্যাপারী ঘাটের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের অফিসটিও দখল করেছেন তারাই। কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠ যুবলীগ নেতা আশিকুর রহমান রনি (ভাঙ্গাড়ি রনি) চার রাস্তার মোড় ময়ূরী ভিলার পাশে সিটি করপোরেশনের পাবলিক টয়লেটের পাশে সরকারি জায়গা দখল করে চারটি পাকা দোকান এবং একটি অফিস করে ভাড়া দিয়েছেন। বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের জন্য যাদের জমি সরকার নিয়েছে তাদের জন্য আলাদা বরাদ্দকৃত জায়গাটিও দখল করে ট্রাক ও বাস রাখার জন্য ভাড়া দেয়া হয়েছে। এখান থেকে নিয়মিত টাকা নিচ্ছেন তারা। এ ছাড়াও তিন রাস্তার মোড় থেকে বসিলা ব্রিজ পর্যন্ত ৩০০ ফিট রাস্তার দুই পাশে শতশত টিনের দোকান, ইট বালুর আড়ত, রিকশার গ্যারেজ, বাঁশের আড়ত এবং গাড়ি পার্কিং করার জায়গা বানিয়েছেন। পাশেই শাহ আলম, অভি ফারুক সরকারি জায়গা দখল করে গড়ে তুলেছেন বাগান বাড়ির মতো যুবলীগের অফিস। এ অফিসে বসে তিন রাস্তার মোড় থেকে বসিলা ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশের অবৈধ্য ব্যবসা থেকে প্রতিমাসে হাতিয়ে নিচ্ছেন কয়েক লাখ টাকা। এসব দোকানপাটে, আড়তে এবং যুবলীগ অফিসে অবৈধ বিদুুৎসংযোগ দিয়ে আদায় করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
অভিযোগ আছে, মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যানে ৫ নম্বর রোডের ডি ব্লকের মন্টু মিয়া নামে একজনের প্লট দখল করে মহিউদ্দিন নামে একজনের কাছে বিক্রয় করে হস্তান্তর করেন। জানা যায়, বাড়িটির সামনে প্রথমে একটি গেট ছিল এবং মন্টু মিয়ার নামে একটি সাইনবোর্ড ছিল। পরে কমিশনার জায়গাটি দখল করেন। অভিযোগ পাওয়া গেছে, কাউন্সিলর প্লটটি দখল করে ৭৫ হাজার টাকায় একজনের কাছে বিক্রি করে দেন। এ ছাড়া তিনি সাত মসজিদ হাউজিংয়ের সি ব্লকের ১ নম্বর রোডের পশ্চিমের মাথায় খালের জমি দখল করে দুইতলা বাড়ি করে তার চাচাতো ভাই বাবুকে উপহার দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ঢাকা রিয়েল এস্টেটের তিন নম্বর রোডের একটি বাড়ি দখলে আছে তার। এ দিকে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের পাশে সাত মসজিদ হাউজিংয়ে আমেরিকা প্রবাসী নজরুল ইসলামের তিন কাঠার একটি প্লট দখল করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটি এবং নবোদয় হাউজিংয়েও প্লট দখলের অভিযোগ রয়েছে কাউন্সিলর রাজিবের বিরুদ্ধে।
শুধু তাই নয়, কাঁটাসুর বাজার দখল করে উন্নয়নের নামে প্রতিটি দোকান থেকে লাখ টাকা করে নিয়েছেন তিনি। কিন্তু উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি এখনো পর্যন্ত। প্রতি কোরবানি ঈদের সময় মোহাম্মদপুরের তিনটি হাট সবসময়ই থাকে তার নিয়ন্ত্রণে। এ দিকে তার লোক যুবলীগ ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা অভি ফারুক এবং শাহ আলম বসিলা রোডের ওপর সরকারি জায়গা দখল করে যুবলীগের অফিস বানিয়েছে। তাতে লাগানো হয়েছে সরকারি বিদ্যুৎ লাইন। যার কোনো বিল পরিশোধ করেন না।
অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের কিছু সদস্যও রাজিবের এই অপকর্মের অংশিদার। রাজিব ওই সব পুলিশ সদস্যকে নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়ে আসছিলেন। যে কারণে প্রকাশ্যে কাউন্সিলর রাজিব অপকর্ম করলেও তার বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথা বলতেন না। রাজিব গ্রেফতার হওয়ার এসব তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।