রহস্যঘেরা জিনের মসজিদ
রহস্যঘেরা স্থাপনা জিনের মসজিদ লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ, যা আনুমানিক ১৮ শ’ শতকের শেষার্ধে নির্মিত হয়েছে। মসজিদটি এলাকায় ‘মৌলভী আবদুল্লাহ সাহেবের মসজিদ’ বলে পরিচিত হলেও এর সামনে সিঁড়ির কাছে লাগানো শিলালিপিতে একে ‘মসজিদ-ই-জামে আবদুল্লাহ’ বলা হয়েছে। ঐতিহাসিক এই মসজিদটি রায়পুর পৌর শহর থেকে ৮-৯ শ’ গজ পূর্বে পীর ফয়েজ উল্লাহ সড়কের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত।
দিল্লির শাহী জামে মসজিদের নকশায় নির্মিত মসজিদটি ১১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৭০ ফুট প্রস্থবিশিষ্ট এবং মাটি থেকে ১০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। এর ভিটির উচ্চতা ১৫ ফুট, যা ১৩ ধাপ সিঁড়িযুক্ত। এর দেয়ালের প্রস্থ ৮ ফুট। মসজিদের সম্মুখের মিনারটি ২৫ ফুট উচ্চতার তিন গম্বুজবিশিষ্ট। সু-উচ্চ প্রাচীরবিশিষ্ট এই মসজিদটির নিচে দক্ষিণাংশে একটি বিরাট প্রকোষ্ঠ রয়েছে; যেটি সব সময় কালো পানিতে পূর্ণ থাকে। মসজিদটির তলদেশে ২০ ফুট নিচে রয়েছে তিন কামরাবিশিষ্ট একটি গোপন ইবাদতখানা, যেখানে বসে ধ্যানে মগ্ন থাকতেন এর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবদুল্লাহ। মসজিদটির সামনে একটি ও পাশে আরেকটি দিঘি রয়েছে।
লক্ষ্মীপুর জেলাধীন রায়পুর উপজেলা একসময় ছিল জনবিরল বিশাল চরাঞ্চল। সেই সময় রায়পুরে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মৌলভী আবদুল্লাহ। সময়টি ছিল ইংরেজি ১৮২৮ সাল। জন্মের পর শিশু আবদুল্লাহর মধ্যে ব্যতিক্রমী জীবন লক্ষ করা যায়। যখন সে কথা বলা শেখে তখন থেকেই তার মধ্যে আধ্যাত্মিকতার ভাব প্রকাশ পায়। কৈশোরে ধর্মীয় শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে আবদুল্লাহ ভারতের দেওবন্দে মাদরাসা দারুল উলুমে ভর্তি হন। সেখানে দীর্ঘ ১৭ বছর ওলামায়ে কেরামের সান্নিধ্যে থেকে উচ্চতর জ্ঞান ও দ্বীনি শিক্ষা লাভ করেন। মৌলভী আবদুল্লাহ জ্ঞান আহরণ শেষে দেশে ফেরার পথে দিল্লিতে কিছু দিন অবস্থান করেন। এ সময় দিল্লি শাহী জামে মসজিদের শৈল্পিক অবয়ব তাকে আকৃষ্ট করে।
প্রায় ২০০ বছর আগে রায়পুরের ঐতিহাসিক জিনের মসজিদ স্থাপিত হয়। অতি স্বল্প সময়ে বিশেষ ডিজাইনের এ মসজিদটি নির্মাণের ফলে এটিকে জিনের মসজিদ বলা হয়। এ সময়ের মধ্যে সামনে দিঘি ও পাশে দিঘি কাটা, ইট তৈরি সাধ্যের অতীত ছিল। মসজিদটি নিয়ে জনশ্রুতি রয়েছে ‘অসংখ্য জিন রাতের আঁধারে মসজিদটি নির্মাণ করেছে। নির্মাণের পর ক’বছর জিনেরা ওই মসজিদে ইবাদতও করেছে। গভীর রাতে তাদের জিকিরের আওয়াজ ভেসে আসত। বলা হতো, মসজিদটি তৈরিতে টাকার জোগান দিয়েছে জিন।’ নির্জন পরিবেশে সেখানে বসে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকতেন মৌলভী আবদুল্লাহ। কথিত আছে, মৌলভী আবদুল্লাহর কিছু জিন শিষ্য রাতে মসজিদটির গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন করত। তাই এই ঐতিহাসিক মসজিদটি জিনের মসজিদ নামে ব্যাপক পরিচিত।