মুন্সীগঞ্জে করোনাভাইরাসের টিকা আবিস্কারের গুজব!
‘তিনটি থানকুনি পাতা ফজরের নামাজের আগে চিবিয়ে খেলে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে মুক্তি মিলবে’ এমনই গুজব ছড়িয়ে পড়েছে মুন্সীগঞ্জ জেলাসহ সারা দেশে। করোনা ভাইরাসে আতঙ্কিত মানুষ গুজবে সাড়া দিয়ে গভীর রাতে ঘুম হারাম করে থানকুনি পাতা সংগ্রহে নেমে পড়ে সড়ক ও ঝাড়-জঙ্গলে। ইতোমধ্যে অনেকেই চিবিয়ে খেয়েছেনও এই পাতা।
মঙ্গলবার দিবাগত রাতে মুন্সীগঞ্জের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এমন গুজব। থানকুনি পাতা সংগ্রহকারী কেউ কেউ দাবি করেন, চরমোনাই পীর স্বপ্নে দেখেছেন থানকুনি পাতা খেলে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে মুক্তি মিলবে।
মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক আহ্বায়ক আতিকুর রহমান টিপু জানান, তাকে সকালে ঘুম থেকে উঠে রাস্তার পাশে দাড়াতেই প্রতিবেশী লিটু করোনাভাইরাসের টিকা (ঔষধ) তাঁর সামনে প্রদর্শন করলেন হাসিমুখে। তিনিও আশ্চর্য হলেন। লিটু জানালেন পাশের ইসলামপুর মসজিদেও তা মাইকিং করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো ঔষধটা কি? তিনি বল্লেন টেগাপাতা। যা পয়সা পাতা বা থানকুনি পাতা নামে পরিচিত। সূর্য উঠার আগেই এটা খেতে হবে।
তিনি আরো জানান, মাঝরাতে তার এক আত্মীয় ফোনে তার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিয়ে এ ফর্মুলা দিতেই টর্চ নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন তিনি। তারপর তা সংগ্রহ করে অপেক্ষা করেন কখন ভোর হবে। ব্যাস, ভোর হতেই তিনি নিজে, স্ত্রীকে ও একমাত্র ছেলেকে তা খাওয়ান করোনার ভ্যাকসিন হিসেবে। আমাকেও বলেন খেতে। তবে সাবধান করে দেন। যেন নিয়মের হের ফের না হয়। মানে খেতে হবে সূর্য উঠার পূর্বে। আমি আর একটু এগুতেই শুনি অনেকেই শুনেছেন এ ফর্মুলার কথা। বলা চলে মুন্সিগঞ্জ জেলার অধিকাংশ মানুষই যেন এ ফর্মুলার মোড়কে বন্দী হয়ে পড়ছেন।
তিনি বলেন, আসলে এ বিষয়টি কতটা কার্যকর তা বোধগম্য না হলেও বিপদে যে মানুষ কতটা অন্ধ হয়ে পড়ে তা অবশ্য বুঝতে কষ্ট হচ্ছেনা। যেমনটি খোদ চীনেও হচ্ছে। হচ্ছে পুরো দুনিয়ায়। তবে চরমোনাই পীর মুফতি মো. রেজাউল করিমের সংগঠন ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ, মুন্সীগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব আল-আমিন খলিফা দাবি করেন, এটি সম্পূর্ণ গুজব। জামাত-শিবিরের কিছু কর্মী এই গুজব রটিয়ে হুজুরকে বিতর্কিত করতে চাচ্ছে।
থানকুনি পাতা সংগ্রহকারীরা জানান, গভীর রাতে মসজিদের মাইকে ঘোষণা করা হয় ‘ফজরের নামাজের পূর্বে তিনটি থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেলে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে মুক্তি মিলবে’।
এছাড়াও আত্মীয় স্বজনরা বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোনের মাধ্যমে এ তথ্য জানান তাদের। কেউ আবার থানকুনি পাতার গুণাবলি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। তাই সবকিছু যাচাই-বাছাই করেই তারা থানকুনি পাতা সংগ্রহ করতে গভীররাতে বের হয়েছেন মানুষজন।
অন্যদিকে স্থানীয় সচেতন মহল গুজবে সাড়া না দিয়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব প্রতিরোধে বিভিন্ন মতামত পোস্ট করছেন।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. আবুল কালাম আজাদ নয়াদিগন্তকে জানান, এটি একটি সম্পূর্ণ গুজব। যদি করোনা ভাইরাসের সঙ্গে থানকুনি পাতার সম্পর্ক থাকত তাহলে আমাদের সভা, সেমিনার ও লিফলেটে উল্লেখ করা হত। থানকুনি পাতার রস হারবাল মেডিসিন। আগে গ্রামগঞ্জে মানুষ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে তা খেয়ে থাকত। তবে, করোনা ভাইরাসের সঙ্গে থানকুনি পাতার কোনো সম্পর্ক নেই।
এ দিকে, মুন্সীগঞ্জের ছয়টি উপজেলায় ৮৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এদের সবাই বিদেশফেরত। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২১ জন, সিরাজদিখানে ১৬ জন, শ্রীনগরে ১০ জন, টঙ্গীবাড়ী ২২, লৌহজং ৮ জন ও গজারিয়া ৮ জন রয়েছেন।