মানুষের অধিকার আদায়ে এই সরকারকে রুখে দিতে হবে : মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘১৯৭১ সালে অর্জিত এদেশের স্বাধীনতা কেবলমাত্র একটি দল বা ব্যক্তির তৈরি নয়। দেশের মানুষের সমন্বিত চেষ্টায় এ স্বাধীনতা এসেছে। স্বাধীনতা চেতনা ছিল, গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা, সু-শাসন ন্যয় প্রতিষ্ঠা, ন্যয্য বিচার ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু দেশের মানুষ এখন তাদের অধিকার ও স্বাধীনতার সে সুফল পাচ্ছে না। তাই অধিকার আদায়ে এ সরকারকে রুখে দিতে হবে।
সোমবার দুপুরে ঠাকুরগাঁওয়ে জেলা কৃষকদলের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
শহরের মির্জা রুহুল অমিন পৌর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে মির্জা ফখরুল আরো বলেন, দেশে আজ উন্নয়নের নামে আত্মহননকারি উন্নয়ন চলছে। শেয়ারবাজার লুট হচ্ছে, হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। ব্যাংক খাত ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। কথায় কথায় সরকার দেশকে সিঙ্গাপুর বানাতে চায়। সিঙ্গাপুরে তো কৃষি নেই, চাষবাস নেই, আছে ক্যাসিনো। সুতরাং বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হবে না, যদি কৃষকের উন্নয়ন না হয়। দেশের কৃষক যেখানে ভালো থাকে না সেখানে দেশর উন্নয়ন হয় কিভাবে? জনসংখ্যার আশি ভাগ যেখানে কৃষক, সেখানে কৃষকের উৎপাদিত ফসলের মূল্য তারা পায় না। লোকসান দিতে দিতে মানুষ এখন ধান, পাট, আলু, ভূট্টাসহ অন্যান্য ফসল চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
তিনি আরো বলেন দেশে এখন কথা বলা যায় না, আদালতে গেলে বিচার পাওয়া যায় না। আমরা বিশ্বাস রাখবো কোথায়? স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পরেও আমাদের অধিকার নিয়ে চিৎকার করতে হচ্ছে। ঠিক যেমন জামিন পাওয়া বেগম জিয়ার অধিকার। কিন্তু সরকার ইচ্ছে করেই তার বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা দিয়ে ১৮ মাস ধরে তাকে কারাগারে বন্দি করে রেখেছে। তিনি খুবই অসুস্থ, তাকে সুচিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে সরকার ভয় পায়। কারণ এ সরকার তো প্রকাশ্যে জনগণের ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছে। তারাই সব চেয়ে বড় চোর।
ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সমাজকে নষ্ট করে দিয়েছে। চারদিকে হত্যা,ধর্ষণ, গুম, খুন, চাদাবাজিতে ভরে গেছে। এখন জনগণকে স্বান্তনা দিতে চুনোপুটির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু আসল গুলো কোথায়? তাদেরকে কেন খুজে বের করা হচ্ছে না? প্রশ্ন রাখেন ফখরুল।
সরকারের নতজানু পররাষ্ট্র নীতির সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ভারত নাকি আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় বন্ধু, অথচ ভারতের নিকট থেকে বাংলাদেশের কোন ন্যায্য অধিকার আদায় করতে পারছে না। ফারাক্কার পানি, তিস্তার পানি আনতে পারছে না। ভারত-বাংলাদেশে ১৫৮টি অভিন্ন নদী থাকলেও ভারত আমাদের পানি না দিয়ে একতরফা পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। অপরদিকে সরকার ভারতকে ফেনী নদীর পানি দতে চুক্তি করে আসছে। কিছু আনতে না পারলেও ঠিকই দিয়ে এসেছেন। দেশে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা এসেছে, অথচ বিগত দুই বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরৎ পাঠাতে পারেনি সরকার।
জেলা কৃষক দলের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন,কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাসান জাফির তুহিন, জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিন, নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন আজাদ, কৃষকদলের নির্বাহী সদস্য এসকে সাদী, মোহা, জাফুরুল্লাহ, জেলা কৃষকদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম উজ্জল এর সঞ্চলনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির সহসভাপতি সুলতানুল ফেরদৌস নম্র, যুগ্মসম্পাদক আনসারুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক মামুন অর রশিদ, জেলা যুবদল সভাপতি মাহাবুল্লাহ আবু নূর প্রমুখ।
এর আগে কৃষকদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার দুপুরে এক বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। শহরের মির্জা রুহুল আমিন পৌর মিলনায়তনের সামনে থেকে র্যালিটি বের হয়ে কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে এসে শেষ হয়। পরে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং পায়রা উড়িয়ে দীর্ঘ ১২ বছর পর অনুষ্ঠিত সম্মেলনের উদ্বোধন করেন মির্জা ফখরুল।