মসলার ঝাঁজে অস্থির ক্রেতা স্বস্তি নেই সবজিতেও
পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মরিচ, দারুচিনি, এলাচি প্রভৃতি মসলার ঝাঁজে অস্থির হয়ে গেছে দেশের ক্রেতারা। বেশ কিছু দিন থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এসব পণ্যের দাম। খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবির পর্যবেক্ষণেই উঠে এসেছে দাম বৃদ্ধির এই অস্বাভাবিক চিত্র। গত এক বছরে দাম বেড়েছে ২৭ থেকে ৩২২ শতাংশ পর্যন্ত। দামের এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধি, সরবরাহ ঘাটতি এবং উৎপাদন হ্রাসসহ নানা কথা বলা হলেও দাম সহনীয় করার তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। এছাড়া পূর্ণ শীতেও স্বস্তি মিলছে না সবজির বাজারে। ভরা মৌসুমে একেকটি লাউ কেনার জন্য গ্রাহককে গুনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। এসব নিয়ে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ থাকলেও নির্লিপ্ত সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি মুড়িকাটা নতুন দেশী পেঁয়াজ। এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি কাঁচা দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। বাজারে গতকাল আমদানি করা ছোট পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। তুরস্ক ও মিসরীয় বড় পেঁয়াজ ৮০ থেকে ১০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। টিসিবির হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে ৩২২ শতাংশ। খুচরা বাজারে গতকাল রসুন বিক্রি হয় প্রতি কেজি মানভেদে ১৮০ থেকে ২২০ টাকা। দুই সপ্তাহ আগেও চীনা রসুন ১৫০ টাকার আশপাশে ছিল। এক বছরের ব্যবধানে ১৮৫ শতাংশ দাম বেড়েছে রসুনের।
এলাচির দাম এক বছর ধরে ধাপে ধাপে বেড়ে প্রতি কেজি পাঁচ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। খুচরা বাজারে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে চার হাজার ৮০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা কেজি দরে। এক বছরে দাম বেড়েছে ১৪৪ শতাংশ। কিছু দিন আগে দাম আরো বেশি ছিল। এখন সে তুলনায় কিছুটা কম। নতুন করে বেড়েছে দারুচিনির দাম। কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে দারুচিনি এখন প্রতি কেজি ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সাধারণত ১৮০ থেকে ২২০ টাকার মধ্যে যে মরিচ পাওয়া যায়, তা এখন ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা। টিসিবি বলছে, বাজারে এখন শুকনা মরিচের কেজি ২৬০ থেকে ৪০০ টাকা। হলুদের দাম প্রতি কেজি ২০ টাকা বেড়ে সর্বনিম্ন ১৬০ টাকায় উঠেছে।
বিভিন্ন পর্যায়ের ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভরা মৌসুমেও সবজির দাম সহনীয় পর্যায়ে না আসায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝে অস্বস্তি বিরাজ করছে। খুচরা করলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। পেঁপের কেজি ৩০ থেকে ৫০ টাকা। টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা। ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, গাজরের দামেও একই অবস্থা। ভালোমানের শিমের কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, প্রতি পিস ফুলকপি ও পাতাকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। মুলার কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা। শসা বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। শালগম বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে। ভরা মৌসুমেও গোলআলুর কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা। মাঝারি আকারের একেকটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৯০ টাকায়। এদিকে ধানের বাড়তি দাম এবং রফতানিতে ভর্তুকি দেয়ার অজুহাতে মিল মালিকরা চালের দাম বাড়িয়েই চলেছেন। এ সুযোগে বিক্রেতারা বাড়াচ্ছে কয়েকগুণ বেশিহারে। ফলস্বরূপ রাজধানী ঢাকার পাইকারি ও খুচরা বাজারে লাগামছাড়া বাড়ছে বাঙালির জীবনে অপরিহার্য এ খাবারের দাম। গত সপ্তাহে কেজিতে তিন টাকা বেড়েছে মোটা চালের দাম। আর সরু চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ছয় থেকে আট টাকা। মিনিকেট চাল প্রতি কেজি ৫২ থেকে ৫৫ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না। নভেম্বরের শুরুতে ছিল ৪২ থেকে ৪৩ টাকার মধ্যে। সপ্তাহখানেক আগেও এক দফা দাম বেড়েছে। বাজারের এই অস্থিরতার মধ্যে গত ৩০ জানুয়ারি সরকার চাল রফতানিতে ১৫ শতাংশ নগদ সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে।
চালের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিলগেটে চালের দাম বেশি, তাই বাড়তি দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে। অন্যদিকে মিল মালিকরা বলছেন, ধানের সরবরাহ কম, তাই দাম বেশি। ধানের দাম বাড়ায় চালের দামও বেড়েছে। যদিও পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন ধানের দাম কিছুটা বেশি হলেও মিল মালিকদের যুক্তি সঠিক নয়। কারণ তারা এরই মধ্যে ধানের বিশাল মজুদ গড়ে রেখেছেন। আগের কম দামে কেনা ও এখন কেনা ধানের দামের সমন্বয় করতে তাদের সিন্ডিকেট চালের দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ করে চাল বিক্রেতারা।