ভারতের কাছে হেরে ৩ মাস ঘুমাননি মুশফিক
২০১৬ সালের ২৩ মার্চ। টি-২০ বিশ্বকাপে লড়াই চলছিল বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে। জয়ের জন্য টাইগারদের প্রয়োজন ছিল ৩ বলে ২ রান! সেদিন জয়ের আগাম সেলিব্রেশনে মেতেছিলেন মুশফিক। কিন্তু শেষে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে আর পৌঁছাতে পারেননি। হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে। আলোর গোলার্ধ থেকে অতলান্ত আধাঁর নেমে এসেছিল মুশফিকের ক্রিকেট দুনিয়ায়। চার বছর পর রোববার সেই ভুল শুধরালেন। দায়িত্ব নিয়ে ক্রিজে টিকে ম্যাচ ফিনিশ করে এলেন। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্যাটিং করতে নেমে ৪৩ বলে ৬০ রান করলেন। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ ছক্কা হাকিয়ে ফিনিশিং টাচ দিলেও নায়ক মুশফিকই। ম্যাচের সেরাও তিনি। যেন এক রূপকথার গল্প।
কেমন ছিল দুঃস্বপ্নের সেই দিনগুলো? বগুড়া থেকে মুশফিকুরের বাবা মাহবুব হামিদ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বললেন, “আমার ছেলের মাথা থেকে একটা ‘বোঝা’ নেমে গেল। বেঙ্গালুরুতে সেই ম্যাচ আমাদেরই জেতার কথা। ৩ বলে ২ রান, এমন পরিস্থিতিতে ম্যাচ কেউ হারে? কিন্তু মুশফিক সেদিন পারেনি। এটা ওর ব্যক্তিগত জীবনে মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলেছিল। টানা তিন মাস ঘুমাতে পারেনি। চেনাশোনা সাংবাদিকদের সাথেও বহুদিন কথা বলা বন্ধ রেখেছিল। দিল্লির ইনিংসটা আসলে মুশফিকের মাথা থেকে বড় একটা ‘বোঝা’ নামিয়ে দিলো।”
ভারত সফরের জন্য স্পেশাল প্রস্তুতি কী নিয়েছিলেন? বাবা মাহবুব হামিদ বলছেন, ”মুশফিক ক্রিকেট সংক্রান্ত বিষয়ে কখনই আমাদের সাথে কোনো কথা বলে না। সংকল্প আর জেদ নিজের মধ্যে পুষে রাখে। ছোটবেলা থেকেই ও একেবারে অন্যরকম। আমার বাকি ছেলেদের মতো নয়। বরাবরই ও স্পেশ্যাল।”
তিনি আরো বলেন, “ও যদি এ রকম কিছু চিন্তাভাবনা করে থাকে তাহলে সেটা কাউকে জানাবে না। জানতাম ওর ভেতরে ভেতরে জেদ ছিল। বিশেষ করে বেঙ্গালুরুর ওই ম্যাচটা হার ওকে ভিতরে ভিতরে পোড়াত।”
সাকিব-তামিমকে ছাড়াই ভারত-বধ। মুশফিকের বাবা বলছিলেন, “বেশ কিছুদিন বাংলাদেশের ক্রিকেট টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। এই হতাশা থেকে বেরোনোর জন্য ভারতের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প আর কী হতে পারে! যখন বিমানবন্দরে মুশফিককে বিদায় জানাতে গিয়েছিলাম, তখন সৌম্য-মোসাদ্দেকরা বলাবলি করছিল, ওরা এবার সাকিবের জন্য খেলবে। চোখে মুখে জেদ-প্রত্যয় ঠিকরে বেরোচ্ছিল।”
দিল্লিতে রেকর্ড জয়ের পর মুশফিকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন মাহবুব হামিদ। কিন্তু পারেননি। মেসেজে বার্তা পেয়েছেন। মুশফিকের বাবা জানালেন, “ম্যাচ শেষ হওয়ার পর কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম। তবে পারিনি। পরে ও আমাকে মেসেজ করেছে। সবাইকে দোয়া করতে বলেছেন যেন পরের ম্যাচগুলোতেও ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারে।”
– ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা