বেফাঁস মন্তব্য ডুবিয়েছে সাঈদ খোকনকে
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েছেন বর্তমান মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। তার বদলে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে। তবে কী কারণে সাঈদ খোকনকে বাদ দেয়া হয়েছে তা স্পষ্ট করেনি আওয়ামী লীগ। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে গতকাল এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানিয়েছেন, আমি এত কিছু বলতে পারব না। আমি শুধু এটুকু বলব, মনোনয়নপ্রত্যাশী সবার ব্যাকগ্রাউন্ড, গ্রহণযোগ্যতা, জনপ্রিয়তা এবং কার কতটা জয় পাওয়ার সম্ভাবনা আছে; সেসব বিবেচনা করে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মনোনয়ন বোর্ড সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কাজেই এখানে কার কী খারাপ, কার কী ভালো এ প্রসঙ্গে আমি যেতে চাই না। অবশ্য এর দুই দিন আগে ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন, ক্লিন ইমেজ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে তারা মনোনয়ন দিতে চান। তখনই সাঈদ খোকন মনোনয়ন পাচ্ছেন না বলে গুঞ্জন ওঠে।
আওয়ামী লীগ সূত্র মতে, নগরবাসীর আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করতে না পারা, বিভিন্ন সময় বেফাঁস মন্তব্য, মশা নিধনে ব্যর্থতা ও নগরবাসীকে দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে না পারা, কর্মসূচিতে সঠিক সময়ে উপস্থিত না হওয়া ইত্যাদি কারণে দলীয় মনোনয়ন পাননি খোকন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া কাল হয়েছে তার জন্য। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, সাঈদ খোকন মেয়র হিসেবে পুরো একটি টার্ম দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু এ সময় ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি ও বেফাঁস কিছু মন্তব্যের কারণে অনেকবার নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হয়েছেন। দলীয় রাজনীতিতেও কোন্দলে জড়িয়ে পড়েন তিনি। যেটা ক্ষমতাসীন দলের ইমেজ নষ্ট করেছে। এ ছাড়া, মেয়র হিসেবে খোকন নগরবাসীর আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারেননি। মূলত এসব কারণেই তাকে বাদ দিয়ে ডিএসসিসির মেয়র পদে এবার নতুন প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
গত ২৫ জুলাই রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে এক অনুষ্ঠানে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাকে ‘গুজব’ বলে অবহিত করেন মেয়র খোকন। তিনি বলেন, ‘মশা নিয়ে রাজনীতি কাম্য নয়। সাড়ে তিন লাখ আক্রান্তের যে তথ্য এসেছে, সেটি কাল্পনিক তথ্য। ছেলেধরা আর সাড়ে তিন লাখ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত একই সূত্রে গাঁথা।’ মেয়রের এমন মন্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ দলের ভেতরে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
আগে ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর আজিমপুরের পার্ল হারবাল কমিউনিটি সেন্টারের পাশে কর্মী সমাবেশ ডাকে আওয়ামী লীগ। তার পাশেই ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন পাল্টা কর্মসূচি দেন। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেয়ায় কে বা কারা সমাবেশস্থলের সামনে সিটি করপোরেশনের ট্রাক ভর্তি করে ময়লা রেখে যায়। ওই ঘটনার জন্য মেয়র সাঈদ খোকনকেই দোষারোপ করা হয়। এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন মেয়র খোকন। এ নিয়েও দলীয়ভাবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেছেন, মেয়র হিসেবে সাঈদ খোকন অনেক কাজ করেছেন। কিছু কাজ বাকি রয়েছে। তার আরো কাজ করার সুযোগ ছিল। তবে কিছু বেফাঁস কথাবার্তা তাকে সমালোচিত করেছে। মেয়র খোকন নির্বাচনের আগে ও পরে নগরবাসীকে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সেগুলোর পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। তবে অনেক দূর এগিয়েছেন বলে মনে করেন নগর বিশেষজ্ঞরা। তার প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে ছিল- নাগরিকদের জন্য ফুটপাথ উন্মুক্ত করে দেয়া, বুড়িগঙ্গার স্বরূপ ফিরিয়ে আনা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়ন, ডিজিটাল নগরী প্রতিস্থাপন, অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ, মাঠ ও পার্ক উদ্ধার, বস্তি উন্নয়ন ও যানজটমুক্ত ঢাকা গড়া। এসব প্রতিশ্রুতির মধ্যে পুরোপুরিভাবে কোনোটাই বাস্তবায়ন হয়নি। তবে প্রতিটি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন নগর বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘মেয়র খোকনের সামনে ভালো কাজ করার অনেক সুযোগ ছিল। তিনি চেষ্টাও করেছেন। পাঁচ বছর আগের পরিস্থিতি আর বর্তমান পরিস্থিতি এক নয়। এখন ঢাকায় জনসংখ্যা অনেক বেড়েছে। সমস্যাও বেড়েছে। এখতিয়ারবহির্ভূত কিছু প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন। যে কারণে সব প্রতিশ্রুতি তিনি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। তবে আগের চেয়ে ঢাকার অনেক পরিবর্তন হয়েছে।’
মনোনয়ন না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন সাঈদ খোকন। তিনি এখন গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে চান না। অবশ্য মনোনয়ন না পাওয়ার বিষয়টি তিনি আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিলেন। এ কারণে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পর গণমাধ্যমে কথা বলার সময় তাকে কাঁদতে দেখা গেছে। এ সময় সাঈদ খোকন আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, জীবনের কঠিন সময় পার করছি। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেটা ভালো মনে করেন তার জন্য সেটাই করবেন।