বিশ্বব্যাপী কমলেও বাংলাদেশে বাড়ছে এইডস রোগী

January 06 2020, 15:55

দেশে এইডস ও এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। অথচ এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ রোগের সংক্রমণ কমছে। অভিবাসন প্রক্রিয়া ও সীমান্ত এলাকায় অসচেতন যৌন সম্পর্কসহ বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে রোগটি ছড়িয়ে পড়ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৮৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেশে মোট ৭,৩৭৪ জন এইচআইভি সংক্রামিত ব্যক্তি সনাক্ত হয়েছেন। যার মধ্যে ১,২৪২ জন এই রোগে মারা গেছে। ২০০০ সালে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৩২ জন। যা ২০০৯ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ২৫০ জনে। ২০১৮ সালে এসে এটি দাড়ায় ১৪ হাজার। আক্রান্তদের মধ্যে ৭৪ শতাংশ পুরুষ, ২৫ শতাংশ মহিলা এবং বাকি এক শতাংশ তৃতীয় লিঙ্গের। এর মধ্যে ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণের কারণে প্রায় ৩.৯ শতাংশ লোক এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

এদিকে, অভিবাসনের মাধ্যমে দেশে এইচআইভি/এইডস ছড়িয়ে পড়ছে। তথ্য-উপাত্ত বিশ্নেষণে দেখা গেছে, এইচআইভি আক্রান্তদের ৩০ শতাংশেরও বেশি অভিবাসী অথবা তাদের পরিবারের সদস্য। অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক, একই সুচ ব্যবহার করে শিরায় মাদক গ্রহণসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এইডস সংক্রমণ হলেও অভিবাসনের মাধ্যমে সংক্রমণের ঘটনা নতুন করে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আর্ন্তজাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনও অভিবাসনের মাধ্যমে বাংলাদেশে এইডস সংক্রমণের হার বাড়ছে বলে জানিয়েছে।

সংস্থাটি বলছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজের সন্ধানে যাওয়া ব্যক্তিরে মাধ্যমে বাংলাদেশে এইডস ছড়িয়ে পড়ছে। এ প্রেক্ষাপটে আর্ন্তজাতিক ও সরকারি-বেসরকারি অর্থায়ন বাড়ানোর মাধ্যমে দেশে এইডস আক্রান্তের ঝুঁকি হ্রাসের পাশাপাশি চিকিৎসা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

দেশের ২৩ জেলা সবচেয়ে বেশি এই ঘাতক ব্যাধির ঝুঁকিতে রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইডস/এসটিডি কর্মসূচি থেকে সারাদেশে জরিপ করে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম. দিনাজপুর, কুমিল্লা, যশোর, মৌলভীবাজার, কক্সবাজার, খুলনা, নারায়ণগঞ্জ, বাগেরহাট, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, চাঁদপুর, সাতক্ষীরা, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, পটুয়াখালী, কিশোরগঞ্জ, বগুড়া, রাজশাহী, বরিশাল এবং ময়মনসিংহ- এই ২৩ জেলায় এ ঘাতক ব্যধির অধিকমাত্রায় সংক্রমণ দেখা গেছে।

গ্লোবাল ফান্ডের সহায়তায় সেভ দ্য চিলড্রেন এবং আইসিডিডিআরবির ব্যবস্থাপনায় ও এইডস/এসটিডি কর্মসূচির তত্ত্ববধানে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য এইচআইভি প্রতিরোধ সেবা অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে শিরায় মাদক গ্রহণকারী ৯ হাজার ৫০০ জন, নারী যৌনকর্মী ১৮ হাজার ৫০০, সমকামী ২৮ হাজার এবং হিজড়া জনগোষ্ঠীর ৪ হাজার ৬২ জনকে সেবার আওতায় আনা হয়েছে। শিরায় মাদক গ্রহণকারী এক হাজার ৭০০ জনকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সুই-সিরিঞ্জ কর্মসূচির আওতায় মুখে খাওয়ার মেথাডন দেওয়া হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের জাতীয় এইডস/এসটিডি কর্মসূচির কর্মকর্তারা মনে করেন, রোহিঙ্গারা এইডসের ব্যাপক ঝুঁকিতে আছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, মিয়ানমারে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই লাখের ওপর। আর প্রতি হাজারে আটজন এইচআইভি পজিটিভ। তাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব প্রকট।

বাংলাদেশের অনেকের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের যৌন সম্পর্কের কারণে বর্তমানে ভীষণ ঝুঁকিপুর্ণ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। জীবিকার তাগিদে রোহিঙ্গা নারীরা কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় যৌন ব্যবসায় নেমেছেন। ফলে রোগটি ছড়াচ্ছে। স্বামী ও স্ত্রীর মাধ্যমে সন্তানরাও আক্রান্ত হচ্ছে। ২০১২ থেকে গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত কক্সবাজারে ১৮৯ এইডস রোগী পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ৬৪ জন রোহিঙ্গা।

এইডস/এসটিডি কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. শামিউল ইসলাম বলেন, অভিবাসী এলাকা প্রবণ জেলাগুলোতে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা বেশি পাওয়া গেছে। এইচআইভি আক্রান্তদের ৫০ শতাংশ জানেনই না যে তাদের এই রোগ হয়েছে। যারা জানেন, তাদের এক তৃতীয়াংশের বেশি চিকিৎসা নেন না।