বিএসএফ জোরাজুরি করায় গোলাগুলি ঘটনা ঘটে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
রতীয় জেলেদের ইলিশ শিকারকে কেন্দ্র করে রাজশাহীর চারঘাট সীমান্তে বৃহস্পতিবার বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এর কারণ হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বলেছেন, বিএসএফ পতাকা বৈঠকের জন্য অপেক্ষা না করে আটক জেলেকে ছেড়ে দিতে জোরাজুরি করায় গোলাগুলির এ ঘটনা ঘটে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিজিবির তথ্যমতে পতাকা বৈঠকের অপেক্ষা না করে তারা (বিএসএফ) আটক জেলেকে ছেড়ে দেয়ার জন্য জোরাজুরি করছিল। আর তখনই এই গোলাগুলির ঘটনা। এতে একজন বিএসএফ সদস্য মারা যান। বিজিবি মহাপরিচালক ও বিএসএফের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। আমরা মনে করি, এটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আলাপের মাধ্যমে এর একটা সুরাহা হবে।’
শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে। বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে চমৎকার একটা সম্পর্ক রয়েছে। হঠাৎ করে এই দুর্ঘটনায় আমরা সবাই মর্মাহত হয়েছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই জানেন আমাদের মাছ ধরার জন্য ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বিজিবি ও মৎস্য অধিদফতর যৌথ টহল দিচ্ছিল, সেই সময় তারা দেখে একটা নৌকায় করে কিছু সংখ্যক জেলে মাছ ধরছে। তাদের চ্যালেঞ্জ করলে জানা যায়, তারা ভারতীয় জেলে। তাদেরকে যখন আটক করা হয় তখন তাদের কয়েকজন বিএসএফকে খবর দিলে তারা সেখানে চলে আসে। সেখানেই ভুল বোঝাবুঝি হয়।
তিনি বলেন, বিজিবির মহাপরিচালক ও বিএসএফ প্রধানের সঙ্গে কথা হয়েছে। প্রয়োজনে উভয়পক্ষ বসে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান হবে।
এর আগে দু’জন র্যাব সদস্যকে বিএসএফ ধরে নিয়ে গিয়ে চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেরত দেয়া প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে র্যাব টহল দিতে গিয়ে ভুলে ভারতীয় সীমানায় ঢুকে গিয়েছিল। সেজন্যই এই ঘটনাটি ঘটেছে। বিএসএফ তাদের দু’জনকে চোখ বাঁধা এবং আহত অবস্থায় আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। সেটাও একটা বৈঠকের মাধ্যমে সুরহা হবে।’
আবরার হত্যাকাণ্ড নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আমি বারবার বলেছি আমরা খুব শিগগিরই একটা নির্ভুল চার্জশিট দেবো। যাতে করে বিচার বিভাগের কাছে কোনো প্রশ্ন না থাকে। একটা নির্ভুল চার্জশিট দেয়ার জন্য পুলিশ কর্মকর্তারা ব্যবস্থা নিচ্ছেন।’
আলোচনা সভায় সম্প্রীতি বাংলাদেশের সভাপতি পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় এতে সভাপতিত্ব করেন। সঞ্চলনা করেন সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল।
প্রসঙ্গত, রাজশাহীর চারঘাট সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় এক বিএসএফ সদস্য নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে বেআইনিভাবে পদ্মা নদীতে ভারতীয় জেলেদের ইলিশ শিকারকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে।
বিজিবি জানায়, সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে চারঘাট বিওপি এলাকায় আনুমানিক ৩৫০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পদ্মা নদীতে ৩ জন ভারতীয় জেলেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে দেখা যায়।
এ সময় বিজিবির টহল দল উপজেলা মৎস্য অধিদফতরের ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট আবু রায়হান এবং আরও দু’জন সহকারীসহ এক জেলেকে আটক করেন। বাকিরা পালিয়ে যায়। পরে বিএসএফের ১১৭ ব্যাটালিয়নের কাগমারী বিওপি থেকে স্পিডবোটে ৪ জন সদস্য চারঘাট উপজেলার বালুঘাট এলাকার শাহারিয়াঘাটের বড়াল নদীর মুখে আনুমানিক ৬৫০ গজ বাংলাদেশের ভেতরে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করলে বিজিবির টহল দল বাধা দেয়।
ওই চারজনের মধ্যে একজন বিএসএফ ইউনিফর্ম পরা থাকলেও বাকিরা হাফপ্যান্ট ও গেঞ্জি পরা ছিল। বিএসএফ ওই জেলেকে জোর করে ফিরিয়ে নিতে চাইলে তাদের পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে নিয়ম অনুযায়ী ফেরত দেয়ার কথা বলে বিজিবি।
তাদের বলা হয়, আপনারাও অবৈধভাবে বাংলাদেশে এসেছেন, তাই আপনাদেরও নিয়ম অনুযায়ী পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তখন বিএসএফ সদস্যরা জোরপূর্বক জেলেকে নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যেতে চাইলে বিজিবি সদস্যরা তাদের বাধা দেয়।
এ সময় বিএসএফ সদস্যরা উত্তেজিত হয়ে ফায়ার করতে করতে স্পিডবোট চালিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে চলে যেতে থাকে। তখন বিজিবি টহল দলও আত্মরক্ষার্থে ফায়ার করে।
এ বিষয়ে অধিনায়ক রাজশাহী ব্যাটালিয়ন এবং কমান্ড্যান্ট ১১৭ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। পতাকা বৈঠকে জানা যায়, ওই ঘটনায় বিএসএফের ১ জন সদস্য নিহত এবং ১ জন সদস্য আহত হয়েছেন।