বাংলাদেশে অবৈধভাবে মাছ শিকার করছে ভারতের জেলেরা : রিজভী

October 19 2019, 21:03

ভারতের জেলেরা পানিসীমা লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের পানিসীমায় এসে অবৈধভাবে মৎস্য শিকার করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। একইসাথে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনকে ‘স্বান্তনা ভবন’ হিসেবে আখ্যা দেন তিনি।

সম্প্রতি ভারতের সাথে ‘অবৈধ চুক্তি’ ও বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যার প্রতিবাদে এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে শুক্রবার এক বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সকাল সাড়ে ১০ টায় জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের উদ্যোগে এই বিক্ষোভ মিছিল হয়।

নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে আবারো বিএনপি কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে মিছিলে অংশগ্রহণ করেন মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মাহতাব, সদস্য সচিব আব্দুর রহিম, যুগ্ম আহবায়ক নাদিম চৌধুরী, অধ্যক্ষ সেলিম মিয়া, জাকির হোসেন খান, ওমর ফারুক পাটোয়ারী, লোকমান হোসেন হাওলাদার, শাহ আলম, জহিরুল ইসলাম বাশার, এম এ হান্নান, কবির উদ্দিন মাস্টার, সাইদুল ইসলাম টুলু, সদস্য শহিদুল ইসলাম পামেল, জাহিদুল আলম মিলন, হিমু, তানভীর আহমেদ, আহমেদ সোহেল মামুন এবং মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরের মৎস্যজীবী দল নেতৃবৃন্দ। মিছিল শেষে ৭ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। মিছিলে অংশগ্রহণকারী নেতাকর্মীরা ভারতের সাথে অবৈধ চুক্তি ও বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যার প্রতিবাদে এবং বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

মিছিল শেষে রুহুল কবির রিজভী বলেন, বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা নিছক একটি হত্যাকান্ড নয়। আমাদের রাষ্ট্র, সমাজ ও চিন্তা চেতনায় যে পচন ধরেছে-আবরার হত্যা তারই নগ্ন বহি:প্রকাশ। অবৈধ চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসই ছিল আবরার ফাহাদের অপরাধ। এজন্যই তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে আধিপত্যবাদী অপশক্তি বাংলাদেশের বিরোধী গোষ্ঠীকে তারা একটি সতর্ক বার্তা দিয়েছে। তাই আবরারের মৃত্যু কোনো সাধারণ মৃত্যু নয়। তার মৃত্যু দেশপ্রেমিক জনগণকে একটি সুষ্পষ্ট বার্তা দিয়েছে, তা হলো সাহসিকতার সাথে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে বর্তমান আওয়ামী জুলুমবাজ সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। এই বার্তা থেকেই বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও সর্বস্তরের মানুষ আবরার হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে। আধিপত্যবাদী অপশক্তি এবং তাদের এ দেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক জনগণের আন্দোলনের মূর্ত প্রতীকে পরিণত হয়েছেন শহীদ আবরার ফাহাদ। আবরার ফাহাদ বর্তমান দুরাচার সরকারের বিরুদ্ধে কেবল বলিষ্ঠ কন্ঠস্বরই নয়, শহীদ আবরার এখন দেশপ্রেমের প্রতীক।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন এখন স্বান্তনা ভবন। তিনি প্রায়শ:ই তার নিজের স্বজন হারানোর কথা বলে কাঁদেন। স্বজন হারানোর সুবিধাভোগী হিসেবে তিনি কয়েকবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। এই অবৈধ সরকারের লোকজনের দ্বারা কোনো হত্যাকান্ডের পর যখন আর সামাল দিতে পারে না, তখন তারা নাটক তৈরি করে। ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য সরকার অনুগত প্রচার মাধ্যমকে ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার চালায়। হত্যার শিকার হতভাগ্যের পিতা-মাতা বা স্বজনদের গণভবনে ডেকে নিয়ে সান্তনার নামে প্রহসনের নাটক তৈরী করা হয়। প্রধানমন্ত্রী হত্যাকারীকে সর্বোচ্চ শান্তির গ্যারান্টি দেন বটে, কিন্তু নিহত ব্যক্তির নামে অপপ্রচার চালাতে থাকেন। যেমন আবরার ফাহাদ হত্যাকে শিবিরের কর্মী সন্দেহে হত্যা হিসেবে চালানো হচ্ছে।

একইভাবে শহীদ আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের পর ফুঁসে ওঠা আন্দোলনকে স্তিমিত করার জন্য তার পিতা-মাতাকে ডেকে নেয়া হয় গণভবনে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী আবরার ফাহাদ হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন। জনগণ নিশ্চয়ই ভুলে যায়নি যে, ইতোপূর্বে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী-সন্তানদেরও গণভবনে ডেকে নিয়ে সান্তনা দেয়া হয়েছিল। তাকে উদ্ধার এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আজো ইলিয়াস আলীর পরিবার তার সন্ধান পায়নি। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির মা-বাবাও গণভবনের আশ্বাস পেয়েছিলেন। বিশ্বজিৎ এর মা-বাবা, নুসরাতের মা-বাবা, তনুর বাবাকেও গণভবনে ডেকে নিয়ে বিচারের গ্যারান্টি ও সান্তনা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এই সব মামলার কি পরিণতি হয়েছে দেশবাসী তা জানেন। এদেশের জনগণ এই গণভবনের নাম পরিবর্তন করে ‘সান্তনা ভবন’ নামে ডাকতে শুরু করেছেন। ডাক্তারের ‘সরি’ শব্দটি যেমন রোগীর স্বজনের কাছে চরম ভয়ংকর, গণভবনের ‘সান্তনা’ শব্দটিও স্বজনহারাদের কাছে তেমনই ভয়ংকর ! সান্তনার নামে গণভবনের এই প্রহসন যেন দেশবাসীকে আর দেখতে না হয়।

শুক্রবার সকালে নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কার্যালয়ের সামনে থেকে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে মিছিলটি শুরু হয়

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, দেশের সর্বস্তরের মানুষের অব্যাহত দাবি সত্বেও শারীরিকভাবে গুরুতর অসুস্থ জনপ্রিয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিচ্ছেন না প্রধানমন্ত্রী। অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসা ছাড়া জরাজীর্ণ কারাকক্ষে রাখা হয়েছে। সরকার তাকে কোনোভাবেই মুক্তি না দিয়ে কারাগারে হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়নে জোরালো তৎপরতা চালাচ্ছে। এখন আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্য জনসমাবেশে বুক ফুলিয়ে ঘোষণা করছেন বেগম খালেদা জিয়াকে আমৃত্যু কারাগারে বন্দী রাখা হবে। তাতে প্রমাণিত হয়, দেশে আইন আদালত, বিচার-আচার কিছুই নেই। ক্ষমতাসীন দলের ফ্যাসিস্টরা প্রকাশ্য রাজপথেই রায় ঘোষণা করছেন।

তাদের কত বড় স্পর্ধা হলে এদেশের চারবারের প্রধানমন্ত্রী, সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জীবন্ত কিংবদন্তী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দী রেখে হত্যার হুমকী দিতে পারে! চারদিক থেকে পতনের আওয়াজ শুনে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছে বর্তমান অবৈধ সরকার। দেশনেত্রীকে রাজনীতি এবং নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রেখে একতরফাভাবে নির্বাচন করার পর এখন তাদের ভয়ের মাত্রা আরো বেড়ে গেছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, অবিলম্বে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার সুযোগ দিন। অন্যথায় তার সকল দায়-দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।

রিজভী বলেন, আজকে বাংলাদেশের জেলেরা অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। আর ভারতের জেলেরা আমাদের জলসীমা লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে মৎস্য শিকার করছে। আমরা অবিলম্বে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।