বন্ধ পাটকল শ্রমিকদের পাওনা এক বছরের মধ্যে মিটিয়ে দেয়া হবে
বন্ধ ঘোষিত সরকারি ২৫ পাটকলের ২৫ হাজার শ্রমিকের পাওনা দুই বছরের পরিবর্তে এক বছরের মধ্যে পরিশোধ করে দেয়া হবে। এ জন্য মোট ব্যয় হবে ৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শ্রমিকদের পাওনার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যর কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। কমিটি এ মাসের মধ্যে একটি রিপোর্ট প্রদান করবে বলে জানা গেছে। তার পর শ্রমিকদের পাওনা অর্থের ছাড় শুরু করা হবে। ইতোমধ্যে বিজিএমসির (বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন) পক্ষ থেকে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও ভাতার বিষয়টি নিরূপণ করার কাজ শুরু করে দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ২ জুলাই রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের সব পাটকল বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা রোববার এই প্রতিবেদককে বলেন, ২ জুলাই থেকে সরকারের হাতে থাকা ২৫টি পাটকল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে ২৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কর্মরত ছিলেন। চলতি অর্থবছরে বাজেটে এসব শ্রমিকের পাওনা মিটিয়ে দেয়ার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের পাওনা বিষয়ে একটি চাহিদাপত্র পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। এই চাহিদাপত্রটি পরীক্ষা করে দেখার জন্য একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে কমিটি করে দেয়া হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে কমিটি রিপোর্টটি আমাদের হাতে আসবে।
তিনি আরো বলেন, আগে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, ২৫ হাজার শ্রমিকের পুরো পাওনা মিটিয়ে দিতে দুই বছরের মতো সময় লাগবে। কিন্তু এখন দুই বছরের পরিবর্তে এক বছরের মধ্যে শ্রমিকদের সব বকেয়া পরিশোধ করে দেয়া হবে। হিসাবপত্র ঠিক থাকলে তার আগে পাওনা মিটিয়ে দেয়া সম্ভব। পাওনা মিটিয়ে দেয়ার জন্য অর্থের কোনো অভাব হবে না।
অন্য দিকে বিজিএমসির এক সূত্র জানিয়েছে, সরকারি যে ২৫টি পাটকল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে তার মধ্যে ছোট পাটকলগুলোর শ্রমিকদের পাওনার হিসাবপত্রের কাজ শুরু করা হয়েছে। এরপর বড় পাটকলগুলো হিসাব করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ২ জুলাই গণভবনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে পাটকল বন্ধের বিষয়ে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউস আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করেন। সে সময় তিনি বলেন, সরকারি খাতের পাটকলগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে শ্রমিকদের সব পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশে যে পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদিত হয় তার ৯৫ শতাংশই বেসরকারি পাটকলে উৎপাদিত হয়। সরকারি খাতটি সঙ্কুচিত হয়ে গেছে, যা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছিল না। এগুলোকে আবার প্রতিযোগিতায় কিভাবে আনা যায় এবং কিভাবে শক্তিশালী করা যায়, সে বিবেচনায় এখন পাটকলগুলো বন্ধ করার ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, যে পাটকলগুলো বন্ধ আছে সেগুলো কিভাবে চালু করা যায়, যাতে সেগুলো বর্তমান ও আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারে। এ-সংক্রান্ত একটি কর্মপন্থা প্রস্তুত করে অতি দ্রত তার কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্যও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
মুখ্যসচিব আরো বলেন, এসব পাটকল বন্ধ থাকলে যে পরিমাণ ক্ষতি হয় চালু থাকলে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়। কাজেই এসব পাটকলের সাথে জড়িত শ্রমিক ভাইদের জীবন-জীবিকার নিশ্চয়তার জন্য সরকার তাদের ২০১৫ সালের জাতীয় মজুরি কাঠামো অনুযায়ী সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে যেসব শ্রমিক অনধিক দুই লাখ টাকা প্রাপ্য তাদের পুরো টাকা এককালীন নগদ পরিশোধ করা হবে। পাওনা টাকার মধ্যে ৫০ শতাংশ এককালীন নগদ এবং অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র আকারে পরিশোধ করা হবে।
বাংলাদেশে সরকারি পাটকলগুলোর সার্বিক চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো গত ৪৮ বছরের মধ্যে শুধু চার বছর লাভের মুখ দেখেছে এবং ৪৪ বছর ধরে অব্যাহতভাবে লোকসান দিয়েছে। ২০১৫ সালের সর্বশেষ মজুরি কাঠামো অনুযায়ী পাটকলগুলোর ২৫ হাজার শ্রমিককে তাদের অবসরকালীন সুবিধাসহ পাওনা পরিশোধ বাবদ সরকারের ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে।