বন্দীরা কথা বলার পাশাপাশি ভিডিও কলে স্বজনদের দেখতে পাবেন

February 21 2020, 06:50

কারাবন্দীরা মোবাইল ফোনে স্বজনদের সাথে কথা বলার পাশাপাশি এবার ভিডিও কলের মাধ্যমে সরাসরি দেখতেও পাবেন। ইতোমধ্যে কারা অধিদফতর থেকে আগের নেয়া মোবাইল ফোনে স্বজনদের কথা বলার ‘স্বজন’ নামক প্রকল্পটি সংশোধন করে সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

কারা অধিদফতর-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো প্রস্তাবটি অনুমোদন হয়ে আসার পরই ৬৮ কারাগারে আটক সাধারণ বন্দীরা তাদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভিডিও কলের মাধ্যমে সরাসরি কথা বলার সুযোগ পেতে যাচ্ছেন। তবে সংশোধিত প্রকল্পের নতুন বাজেট কত টাকা ধরা হয়েছে সেটি কারা সংশ্লিষ্টরা জানাতে পারেননি। গতকাল কারা অধিদফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে নাম না প্রকাশের শর্তে এ প্রসঙ্গে শুধু বলেন, বন্দীদের সাথে তাদের স্বজনদের মোবাইল ফোনে কথা বলানোর যে প্রকল্প চলমান ছিল সেটি সংশোধন করে একটি প্রস্তাব কারা অধিদফতর থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। নতুন সংশোধনী প্রস্তাবনা কী জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, আগে যে প্রকল্প নেয়া হয়েছিল সেটিতে বন্দীরা শুধু নির্দিষ্ট নম্বরে কথা বলতে পারতেন। নতুন প্রস্তাবনায় বন্দীর স্বজনরা যে যেখানে অবস্থান করছেন সেখান থেকেই একটি স্মার্টফোনের মাধ্যমে কথা বলার পাশাপাশি সরাসরি বন্দীকে দেখার সুযোগও পাবেন। এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আগের প্রস্তাবটি সংশোধন করে আমাদের অধিদফতর থেকে প্ল্যানিং কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এটি অনুমোদন হয়ে এলেই কাশিমপুরের একমাত্র মহিলা কারাগারসহ দেশের ৬৮ কারাগারে আটক বন্দীর সাথে স্বজনদের কথার সাথে দেখা করার কার্যক্রম শুরু হবে। এই নিয়ম চালু হলে বন্দীরা যেমন খুশি থাকবেন, একই সাথে তাদের আত্মীয়-স্বজনরাও বাড়িতে স্বাস্তিতে থাকবেন।

বর্তমানে ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে পাইলট প্রকল্প হিসাবে বন্দীর সাথে স্বজনদের কথা বলার জন্য ‘স্বজন’ নামক প্রকল্প চলমান রয়েছে।
এর আগে ২০১৮ সালের ২৮ মার্চ বুধবার টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে কারাবন্দীদের সাথে মোবাইল ফোনে স্বজনদের কথা বলানোর ‘স্বজন’ নামের প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামাান খান কামাল।

কারা অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে কারা সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল ফজলুল কবির সাংবাদিকদের বলেছিলেন, কারবন্দীরা মোবাইল ফোনে পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলতে পারবেন। এর জন্য কারাগারে প্রবেশের সময় কারা কর্তৃপকে পরিবারের দু’টি মোবাইল ফোন নম্বর দিতে হবে। পরিবার থেকে বা বাইরে থেকে কারাগারের নম্বরে কেউ ফোন দিতে পারবেন না। তবে এসএমএস করতে পারবেন। সেই এসএমএসের তথ্যগুলো কারাবন্দীর কাছে পৌঁছানো হবে। তিনি আরও বলেছিলেন, ‘বন্দীদের সব ক’টি কলই রেকর্ড করা হবে। পরবর্তী সময়ে সেই কথাগুলো অ্যানালাইসিস করা হবে।’ বন্দীদের মানসিক দিক পর্যবেণ করার জন্য ২০ জন মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ দেয়া হচ্ছে বলেও সাবেক এই কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন। এর আগে কেরানীগঞ্জের নতুন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কারাবন্দীদের নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরিবারের সাথে ফোনে কথা বলার সুযোগ সৃষ্টির ব্যবস্থা করা হবে’ মর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তার প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে দীর্ঘ পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর পাইলট প্রকল্প হিসেবে কারা কর্তৃপক্ষ টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে এই কার্যক্রম শুরু করে।
টাঙ্গাইল জেলা কারাগার সূত্রে জানা গেছে, এই সেবার জন্য কারা অভ্যন্তরে চারটি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। একটি কক্ষের মধ্যেই স্থাপন করা হয়েছে এগুলো। মোবাইল ফোনে একই সময়ে স্বজনদের সাথে চার বন্দী কথা বলতে পারবেন। তবে শুধু সাধারণ বন্দীদের জন্য এ সুবিধা থাকছে। কোনো উগ্রবাদী বা শীর্ষ সন্ত্রাসী বা গুরুতর অপরাধের কোনো বন্দী এ সুযোগ পাবেন না। প্রকল্পের নীতি অনুযায়ী একজন কারাবন্দী মাসে দুইবার এবং প্রতিবারে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট করে কথা বলতে পারবেন। এ ছাড়া প্রতি বন্দী শুধু দু’জন নিকটাত্মীয়ের সাথে কথা বলার সুযোগ পাবেন। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত কথা বলার সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।