প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে চাকরি দেয়ার নামে কোটি কোটি টাকা প্রতারনা: এরা কারা?
সাজ্জাতুল হাসান রিমন (বিশেষ প্রতিবেদক) : দেশের বেকার যুবকদের টার্গেট করে নিজেদের প্রধানমন্ত্রীর আত্বীয় পরিচয় দিয়ে, আবার কোন সময় কোনো মন্ত্রীর একান্ত লোক বলে ভূয়া পরিচয়ে চাকরি দেয়ার নাম করে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। চাকুরি দেয়ার নামে দেদারছে প্রতারণা করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না, কেউ কেউ পাওনা টাকা চাইলে হত্যার হুমকিসহ ভুক্তভোগী পরিবারকে দেখে নেয়ার হুমকি দিচ্ছে এই প্রতারক চক্রটি। এচক্রটি সেনাবহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বাংলাদেশ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের নিয়োগ বাণিজ্যের নাম করে দীর্ঘ দিন ধরেই এ প্রতারণা করে আসছে। চক্রটিকে শীঘ্রই আইনের আওতায় না আনা হলে দেশের হাজার হাজার যুবক এদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে জীবন ধ্বংস করবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারি বিভিন্ন দফতর ও প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার নামে নারায়ণগঞ্জ জেলার মাহফুজুর রহমান চৌধুরী (বাপ্পী) ও মো: সালাউদ্দিন সিকদার বিভিন্ন কৌশলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। চাকরি নামক সোনার হরিণটি পেতে যুবকরাও তাদের ফাদে পা দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। অনেক যুবক বাবার শেষ সম্বল গ্রামের জমি বিক্রি করে চাকরি পাবার আশায় এ প্রতারক চক্রটির হাতে লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে আজ তারা নি:স্ব। প্রতারক চক্রটি গ্রামের মধ্য শিক্ষিত বেকার ও নিরীহ যুবকদের চাকরি দেয়ার নাম করে প্রায় কয়েক হাজারের বেশি চাকরি প্রত্যাশির সাথে প্রতারণা করেছে।
প্রতারকচক্রের এই মূল হোতারা নিজেরা ঢাকা শহরে ভিন্ন ভিন্ন নামে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছে। গ্রামের সহজ সরল ছেলেদের এসব প্রতিষ্ঠানে ঢেকে নিয়ে সরকারি দপ্তরে চাকরির ধরণ বেধে ১৩ লক্ষ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চুক্তি করে থাকে।
এছাড়া চক্রটি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তে সৈনিক পদে চাকরি দেয়ার কথা বলে ১০ লক্ষ টাকা করে চুক্তি করে অগ্রীম ২ লক্ষ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে ৭৫ জনের কাছ থেকে। চক্রটির ডায়েরিতে সংরক্ষিত একটি লিস্টের হিসেব মতে, মুন্সীগঞ্জের ১২জন, ময়মনসিংহের ৮জন, নেত্রকোনার ১২জন, কুষ্টিয়ার ৯জন, গাইবান্ধার ১৪জন, মাগুরার ২জন, জয়পুরহাটের ৭জন, শেরপুরের ১১জন চাকরি প্রার্থী বিজিবিতে চাকরির জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।
চক্রটি গত ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার ম্যান পদে চাকরি দেবার কথা বলে ফিল্ড টেস্টে উত্তীর্ণ প্রায় ২০০ প্রার্থীর কাছ থেকে ১৩ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে।
বিজিবিতে চাকরি দেয়ার কথা বলে প্রতারণার শিকার ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের মো: সেলিম মিয়া জানান, এরা বড়ই চালাক প্রকৃতির লোক। আমি বিজিবিতে আবেদন করেছি এমন একটি পোস্ট ফেসবুকে দেখে প্রতারক সালাউদ্দিন সিকদার আমার সাথে ম্যাসেঞ্জারে কথা বলে। এভাবে তার সাথে কথা হয়। এক পর্যায়ে চাকরি নিশ্চিত দিতে পারবে বলে জানায় সালাউদ্দিন সিকদার। তিনি এর আগেও এমন হাজার হাজার মানুষকে চাকরি দিয়েছেন বলেও জানান।
এদিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন (বিআইডব্লিউটিএ) এর টার্মিনাল গার্ড পদে চাকরি দেয়ার কথা বলে প্রধানমন্ত্রীর আত্বীয় পরিচয়ে মাহফুজুর রহমান চৌধুরী (বাপ্পী) ফেসবুকে সম্পর্ক গড়ে তুলেন ময়মনসিংহের বয়ড়া ও সুতিয়াখালী এলাকার ফারুখ মিয়া ও স্বপনের সাথে। তাদের সাথেও এক পর্যায়ে ১০ লক্ষ টাকা করে চাকরি দেয়ার নামে চুক্তি করা হয়। এবংনগদ ৩ লক্ষ টাকা করে এই দুজনের কাছ থেকে অগ্রীম নেয়া হয়। ময়মনসিংহের হাসান আল নূর নামের এক যুবকের কাছ থেকেও বিআইডব্লিউটিএ এর টার্মিনাল গার্ড পদে চাকরি দেয়ার কথা বলে নিয়েছে আরো ২ লক্ষ টাকা।
এছাড়া ২০১৯ সালের সেনাবাহিনীতে টেকনিক্যাল ট্রেড – পুরুষ পদে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে জামালপুরের ৫ জন, বগুড়ার ৩জন, সাতক্ষীরার ৭ জনের কাছ থেকে ১১ লক্ষ টাকা চুক্তি করে প্রত্যেকের কাছ থেকে অগ্রীম ২ লাখ, ৩ লাখ করে নিয়ে এখন পর্যন্ত টাকা ফেরত দিবে দিচ্ছে বলে তালবাহানাই চলছে।
সাতক্ষীরার সুলতান মাহমুদ সুজন জানান, প্রায় দুই বছর হতে চলছে এখনও আমি আমার টাকা ফেরত পাইনি। টাকা চাইলে আরো উল্টো হুমকি দেয় এখন। সেনাবাহিনীতে চাকরি নেয়ার জন্য টাকা দিয়েছি একথা মানুষের কাছে বলাবলি করলে নাকি আমি নিজেই বিপদে পড়ব। তাই এখন না মুখ বুঝেই সহ্য করছি সব। তবে এদের বিচার হওয়া দরকার। মাহফুজুর রহমান চৌধুরীর ক্ষমতা অনেক, তাই তার বিরুদ্ধে কথা বলার বা অভিযোগ দেয়ার সাহস আমার নাই।
এব্যাপারে মাহফুজুর রহমান চৌধুরীর সাথে ০১৯৭৮ ০০০০৭৮ নাম্বারে যোগাযোগ করলে তিনি তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার সাথে সাথে সংযোগ বিচ্ছন্ন করেন। বারবার তার মোবাইলে কল দিয়েও কথা বলা সম্ভব হয়নি। এব্যাপারে সালাউদ্দিন জানান, তাদের একটি জব ফার্ম আছে। সেখান থেকে তারা বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরি প্রত্যাশীদের লিংকআপ করেদেন। বিনিময়ে তারা টাকা নেন না। চাকরির জন্য তাদের ব্যাংক একাউন্টে বিভিন্ন চাকুর প্রত্যাশীরা যে লাখ লাখ টাকা পাঠানোর রিসিট দেখাচ্ছে এগুলোর ব্যাপারে তিনি বলেন, এ বিষয়টি মাহফুজেুর রহমান চৌধূরী বলতে পারবে। তবে তিনি স্বীকার করেন যে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সাথে লেনদেন থাকায় মাহফুজুর রহমান বাপ্পী তার ব্যাংকের চেক বিভিন্ন জনের কাছে জমা রেখেছেন।
এই দুই প্রতারক চক্রের প্রতারণার সমস্ত ডকুমেন্টস ও ভুক্তভোগীদের ভিডিও স্বাক্ষাতকারসহ পরবর্তী প্রতিবেদন প্রকাশ হবে শীঘ্রই।