নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতার পরিবর্তন হতে পারে না : ফখরুল
আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। আমরা মনে করি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতার পরিবর্তন হতে পারে না। আমরা মনে করি জনগণের ঐক্যের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন ঘটানো যাবে।’
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের নসিমন ভবনে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সমস্ত স্থানীয় নির্বাচনে যাব, এ ঘোষণা আগেই দিয়েছি। এই সময়ের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক আন্দোলন হচ্ছে নির্বাচনে অংশ নেয়া।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকায় (দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে) ৫ থেকে ৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। অথচ তারা বলছে ২০-২৫ শতাংশের কথা। সবগুলো ভুতুড়ে ভোট। যুবলীগের ক্যাডাররা ভোটারদের ঘিরে রেখে নিজেরাই ভোট দিয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) নিজের ফিঙ্গার প্রিন্ট মেলেনি, পরে প্রিসাইডিং অফিসারের ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে ভোট দিয়েছেন। এভাবে যদি প্রিসাইডিং অফিসাররা ভোট দিতে পারেন, তাহলে তো সব ভোট তারাই দিয়েছেন।’
‘এই যে নির্বাচনের নামে তামাশা তারা করছে, এর মাধ্যমে তারা মূলত বাকশাল কায়েম করতে চায়। যারা পুরোনো লোক, তারা জানেন ’৭৫ সালে তারা কীভাবে বাকশাল কায়েম করেছিল। দেশে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা-গুম করা হয়েছিল। চারটি পত্রিকা ছাড়া সব পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘সেই ধারাবাহিকতায় সারাদেশে বিএনপির ৩৫ লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। যখন যেভাবে পারছে হত্যা করছে, গুম করছে, জুডিসিয়াল কিলিং করা হয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা হচ্ছে। দেশের প্রধান বিচারপতিকে (সুরেন্দ্র কুমার সিনহা) বন্দুকের জোরে দেশ থেকে বের করে দিয়ে এখন তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হচ্ছে। যখন তিনি প্রধান বিচারপতি ছিলেন তখন তার দুর্নীতি কোথায় ছিল?’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত কঠিন সময় অতিক্রম করছি। এত দুঃসময় কখনো আসে না। একটি দল স্বাধীনতার আগে গণতন্ত্রের কথা বলেছিল, জনগণের মুক্তির কথা বলেছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর সে কথা রাখেনি। এখন আবার সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে গলা টিপে হত্যা করছে।’
কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। তিনি এতটাই অসুস্থ যে বিছানা থেকেও উঠতে পারেন না, দাঁড়াতেও পারেন না। সুগার লেভেল বেড়ে গিয়েছে। যিনি গণতন্ত্রের জন্য সারাজীবন ত্যাগ শিকার করেছেন, তাকে সরকার পরিকল্পিতভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের দিকে ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘চট্টগ্রামের একজন নেতা আছেন, খুব কথা বলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও কথা বলেন। অথচ মুক্তিযুদ্ধের সময় এই মন্ত্রীর জন্ম হয়েছে কি-না, তা নিয়েও সন্দেহ আছে। বিএনপি কোনো দল নয়, বিএনপির জনসমর্থন নেই- এরকম বলে বেড়ান সেই মন্ত্রী। আচ্ছা আমরা যদি জনপ্রিয়ই না হই, তাহলে সারাদিন আমাদের নিয়ে কথা বলেন কেন?’
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান শামীম, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল, নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন প্রমুখ।