ঢাকা-৫ আসনে জাপার একক প্রার্থী আসুদ
ঢাকা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হচ্ছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ। তিনিই এ আসনে দলের এককপ্রার্থী।
তবে দলের প্রার্থী হওয়ার জন্য কেউ কেউ আগ্রহ প্রকাশ করলেও মীর আব্দুস সবুর আসুদ ছাড়া কেউ এখন পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম কেনেননি।এই আসনে তাকেই মনোনয়ন দিচ্ছে জাতীয় পার্টি। ফলে, লাঙল প্রতীক নিয়ে ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদসহ যারাই এই আসনের উপনির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন আগামী ১২ সেপ্টেম্বর আমরা তাদের সাক্ষাৎকার নেবো। দলের পার্লামেন্টারি বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করে যোগ্য প্রার্থী ঘোষণা করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি থেকে যাকেই প্রার্থী করা হোক না কেন লাঙল প্রতীকে তিনি শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবেন। জয়-পরাজয় যাই হোক আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাবো।’
ডেমরা, যাত্রাবাড়ী ও আংশিক কদমতলী নিয়ে গঠিত ঢাকা-৫ আসনটি জোটগতভাবে সরকারি দল আওয়ামী লীগের। গত ৬মে প্রবীন সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়। শূন্য আসনে এককভাবে প্রার্থী দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। হয়তো সরকারি দলের এই প্রার্থীকে চৌদ্দ দল সমর্থন জানাতে পারে। কিন্তু মহাজোটের হয়ে আসনটি নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা হচ্ছে না জাতীয় পার্টির। শরিক দল হিসেবে জাতীয় পার্টিও আসনটি ছেড়ে দিচ্ছে না আওয়ামী লীগকে। বরং জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ দুদলই প্রার্থী দিয়ে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামছে।
দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ঢাকা-৫ আসনে আমরা নির্বাচন করবো। এই আসনে আমাদের এককপ্রার্থী থাকছে। যোগ্য প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।’
জানা গেছে, ২৯ আগস্ট ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে ফরম কেনেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ। জাতীয় পার্টির নেতা হিসেবে তিনি রাজনীতিসহ সমসাময়িক বিষয় নিয়ে নিয়মিত টিভি টকশো করে বেশ জনপ্রিয়।
যাত্রাবাড়ি মাতুয়াইল এর ৬৫নম্বর ওয়ার্ডে তার স্থায়ী বাড়ি। স্থানীয় হওয়ায় নির্বাচনী এলাকায় তার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। তার পিতা মরহুম মীর আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন ঢাকা ওয়াসার সাবেক তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। পারিবারিকভাবেও তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি রয়েছে নির্বাচনী এলাকায়।
ঢাকা-৫ আসনের উপ নির্বাচনে প্রার্থী কে হচ্ছেন জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি জানান, এ আসনে প্রার্থী হচ্ছেন আসুদ। লাঙল প্রতীকে জয়ের ব্যাপারেও আশাবাদী তিনি।
১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস করা মীর আব্দুস সবুর আসুদ দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে লাঙল প্রতীকে ঢাকা-৫ আসন থেকে নির্বাচন করেন। সামনে উপ-নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী এলাকায় চষে বেড়াচ্ছেন তিনি।
সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাত ধরে তিনি ১৯৮৩ সাল থেকে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে। যুব সংহতি ও জাতীয় পার্টির বিভিন্ন পদে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে বর্তমানে তিনি দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং জাতীয় শ্রমিক পার্টির সমন্বয়কারী।
’৮৩ থেকে ’৯০ সাল পর্যন্ত যুব সংহতির কেন্দ্রীয় সদস্য, অবিভক্ত ঢাকা মহানগরীর সহ-সভাপতি, ’৯১-২০০০ জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক, একইসঙ্গে যুবসংহতির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ ও অভিবক্ত মহানগরীর সভাপতি ছিলেন তিনি। ২০০১ থেকে ২০০৬ যুবসংহতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক, সহ-সভাপতি পরবর্তীতে সভাপতি।
একই সময়ে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ২০০৬ সালে জাপার যুগ্ম মহাসচিব, ২০০৭ সালে ভাইস চেয়ারম্যান, পরবর্তীতে এরশাদের যুব বিষয়ক উপদেষ্টা একইসঙ্গে সহযোগী সংগঠন জাতীয় ক্রীড়া সংহতির দায়িত্ব পালন করেন।
মীর আব্দুস সবুর আসুদ শুধু রাজনীতিবিদই নন, প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগে এবং জাতীয় দলের ডাক পাওয়া ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন তিনি। ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত তিনি ইন্টার স্কুল-কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল দলের খেলোয়াড় ছিলেন।
তিনি ১৯৮৩-২০১৪ সাল পর্যন্ত ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের পরিচালনা পরিষদের সদস্য, সহ-সভাপতি, মোহামেডান স্পোটিংক্লাব ও সদস্য সোনালী অতীত ক্লাবের কার্যকরী কমিটির সদস্য ছিলেন।
রাজনীতিক আসুদ দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতাও করে আসছেন। তিনি ‘দৈনিক পত্রিকা’র নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। তিনি বর্তমানে দৈনিক প্রভাতী খবর, সাপ্তাহিক ঘায়েল, সাপ্তাহিক ঢাকা সংবাদের সম্পাদক ও প্রকাশক।
নির্বাচনে অংশ গ্রহণের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘দল মনোনয়ন দিলে আমি নির্বাচন করবো। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ইনশাআল্লাহ জয়ী হবো।’
ঢাকা-৫ আসনের উপ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে ১৭ অক্টোবর। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টটা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। এ দুই আসনে ইভিএম-এর মাধ্যমে ভোট নেওয়া হবে।
গত ৩ সেপ্টেম্বর এই আসনে উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ১৭ সেপ্টেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২০ সেপ্টেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষদিন ২৭ সেপ্টেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ হবে ২৮ সেপ্টেম্বর।