ঢাকায় বাড়িঘরে রঙ করার নোটিশ, কিভাবে দেখছেন বাসিন্দারা

March 03 2020, 13:01

কলাবাগানের বাসিন্দা শাম্মী আক্তার কয়েকদিন আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে একটি চিঠি পেয়েছেন। সেখানে তাকে বাড়ির রঙ ও সংস্কার করতে বলা হয়েছে। যদিও মাত্র দুই বছর আগেই তিনি বাড়ির রঙ করিয়েছেন।

‘সিটি করপোরেশনের লোকজন এসে বলে গেছে, মুজিব জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আমার বাড়ি রঙ করতে হবে। আশেপাশের বাড়িগুলোকেও তারা এ কথা বলে গেছে। দেখুন, দুই বছর আগে রঙ করিয়েছি। এখন আবার নাকি করাতে হবে।’

তিনি বলছেন, ‘এটা করানোর দরকার হলে তারাই টাকা খরচ করে করিয়ে দিক। আমাদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে কেন?’

মঙ্গলবার জাতীয় পত্রিকাগুলোয় এ সংক্রান্ত একটি গণবিজ্ঞপ্তিও দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

সেখানে বলা হয়েছে, শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে শহরকে দৃষ্টিনন্দন করতে গুরুত্বপূর্ণ সড়কসমূহ সজ্জিত ও আলোকসজ্জা করা হচ্ছে। সে কারণে সড়কসমূহের পার্শ্বে বাড়ী/স্থাপনা, গেইট ও বাউন্ডারি ওয়াল প্রয়োজনীয় সংস্কার ও রঙ করা প্রয়োজন। এতে শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে।

স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ দ্বারা রঙ করতে বাধ্য করার ঘটনা খুব বিরল। যদিও এর আগে ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ চলার সময় যানবাহন ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কের সব বাড়িতে নতুন রঙ করার নির্দেশ দিয়েছিল সরকার।

‘একজন সম্মানিত নাগরিক হিসাবে সামাজিক দায়িত্ববোধ ও দেশপ্রেমিক নাগরিকের কর্তব্য হিসাবে আগামী ১৪ই মার্চ, ২০২০ তারিখের মধ্যে আপনার বাড়ী/স্থাপনার গেইট ও বাউন্ডারি ওয়াল সংস্কার ও রঙ কার কাজ সম্পন্ন করে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠান যথাযথভাবে উদযাপনে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’ এভাবেই লেখা হয়েছে ওই গণবিজ্ঞপ্তিতে।

কলাবাগান, ধানমণ্ডি, আজিমপুরের কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, সিটি করপোরেশন থেকে বাড়িঘর সংস্কার ও রঙ করার তাগাদা দিয়ে তাদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। করপোরেশনের কর্মকর্তারা বাড়ি বাড়ি গিয়েও এজন্য তাগাদা দিচ্ছেন।

প্রধান সড়কগুলোর পাশের ভবন মালিকরা এ নোটিশ পেয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভবন মালিক বলছেন, ‘সরকার অনুষ্ঠান করবে করুক, কিন্তু সেজন্য আমাকে পয়সা খরচ করে বাড়ি রঙ করতে হবে কেন? আমার তো এখন রঙ করার কোনো দরকার নেই। অথচ সেটা করার জন্য আমাকে নানাভাবে চাপ দেয়া হচ্ছে।’

তবে কোনো কোনো বাসিন্দার এ নিয়ে ভিন্নমতও রয়েছে।

ধানমণ্ডির শিখা রহমান মনে করেন, নাগরিক হিসাবে বাড়িঘর ঠিক করে রাখার দরকার আছে।

‘তারা হয়তো একটি উপলক্ষ সামনে রেখে এই নোটিশ দিয়েছে। কিন্তু ঢাকার একজন বাসিন্দা হিসাবে সব বাড়ি মালিকেরই তো উচিত নিজের বাড়ি সংস্কার করে ঠিকঠাক করে রাখা, নিয়মিত রঙ করা যাতে দেখতে ভালো লাগে।’

সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ এ তাদের এই ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। নগরের সৌন্দর্য রক্ষায় তারা ভবন মালিকদের চুনকাম ও মেরামত করার নির্দেশ দিতে পারেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (যিনি এই বিষয়টির তত্ত্বাবধানে রয়েছেন) মোঃ ইউসুফ আলী সরকার বিবিসিকে বলছেন, ‘প্রধান সড়কগুলোর পাশে যেসব বাড়ি বা ভবন রয়েছে, তাদের মালিকদের আমরা চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছি যেন তারা ভবনগুলো ঠিক মতো রঙ করেন বা সংস্কার করেন। যদিও বিশেষ একটি উপলক্ষে আমরা এই চিঠি পাঠিয়েছি, কিন্তু আসলে নগরের সৌন্দর্যের জন্য এটা একটা নিয়মিত কাজ। স্থানীয় সরকার আইনে এ ব্যাপারে বিধান আছে।’

তিনি জানান, আগামী ১৪ই মার্চের মধ্যে এসব কাজ শেষ করার জন্য বলা হয়েছে।

‘আমরা চিঠি দিয়েছি, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। তাদের আমরা বারবার অনুরোধ করবো, বাড়ি বাড়িতে যাবো। আমলা আশা করি তাদের সহযোগিতা পাওয়া যাবে। তারা আমাদের অনুরোধ রাখবেন।’

কেউ যদি এই অনুরোধ না রাখে বা ভবনের রঙ না করে, তাহলে কী হতে পারে।

এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলছেন,‘তেমনটা হবে আমরা আশা করি না। আমরা আশা করছি সবাই অনুরোধ রাখবেন।’

বাংলাদেশে প্রধান সড়কগুলোর পাশে বাড়িঘর রঙ করা হলেও তাদের অনুমতি ছাড়াই পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন বা দেয়াল লিখন একটি প্রায় নিয়মিত ব্যাপার। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাড়ির মালিকের কোনরকম অনুমতি ছাড়াই এটি করা হয়।

স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ দ্বারা রঙ করতে বাধ্য করার ঘটনা খুব বিরল।

যদিও এর আগে ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ চলার সময় যানবাহন ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কের সব বাড়িতে নতুন রঙ করার নির্দেশ দিয়েছিল সরকার।

সে সময় বলা হয়েছিল, গাড়িতে রঙ করা না হলে ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করবে। আর বাড়িতে রঙ করা না হলে সিটি করপোরেশন রঙ করে দেবে, তবে খরচ বহন করতে হবে বাড়ির মালিককে।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলছেন, বাংলাদেশে এর আগে এরকম অনুরোধ জানানোর ঘটনা তিনি খুব একটা দেখেননি।

‘স্থানীয় সরকার আইনে আছে যে, যদি কোন ভবন বিপজ্জনক হয়, জনজীবনের জন্য হুমকি হয়, ক্ষতিকর মনে হয়, তাহলে সেটার সংস্কার করার জন্য তারা আদেশ দিতে পারবে। কিন্তু শুধুমাত্র সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য বাড়ির মালিকদের রঙ করতে, সংস্কার করতে বাধ্য করার নজীর বাংলাদেশে আছে বলে আমার মনে হয় না। তারা অনুরোধ করতে পারে, কিন্তু বাধ্য করতে পারে না।’

‘উন্নত দেশগুলোয় ভবনের নকশা অনুমোদন থেকে সবকিছুই সিটি কর্পোরেশন করে। ফলে তারা ভবন সংক্রান্ত অনেক আদেশ দিতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে তো এই কাজটি বিভিন্ন সংস্থা আলাদাভাবে করে।’ সূত্র : বিবিসি