টিকিট কেটেও যারা যেতে পারেনি তাদের রিপ্লেসমেন্ট দেবে বিমান

September 02 2020, 04:57

Westjet 737-800 air to airWestjet 737-800 air to air

 

যেসব প্রবাসী শ্রমিকের টিকিট কাটা আছে অথচ কর্মস্থলে যেতে পারেনি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স তাদের রিপ্লেসমেন্ট দেবে এবং এর জন্য কোনো টাকা নেবে না। গতকাল দুপুরে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো: মহিবুল হক আবুধাবি ফেরত শ্রমিকদের পুনরায় দেশটিতে পাঠানো সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। এর আগে গত মাসে ফেরত আসা শ্রমিকদের সমস্যা নিয়ে তিন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি আবুধাবি থেকে কর্মী ফেরত আসার ‘প্রকৃত’ কারণ উল্লেখ করে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে গত সপ্তাহে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও এয়ার অ্যারাবিয়ার ফ্লাইটে দেশে ফেরত আসা ১১২ প্রবাসী শ্রমিককে সরকারি ব্যবস্থাপনায় আবারো আবুধাবিতে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।

বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ প্রতিবেদককে বলেন, বিমান তো একটি ক্যারিয়ার। বিমানের যে টিকিট কাটবে সেই বিমানে যাবে। বিমানের কি আর কোনো রেসপনসিবিটি আছে? বিমানের আর কোনো রেসপনসিবিলিটি থাকার কথা নয়? এখন আবুধাবি কর্তৃপক্ষ অফিসিয়ালি বলছে, যাদের এমপ্লয়মেন্ট ভিসা আছে তারা সবাই আবুধাবিতে আসতে পারবে। কিন্তু আবুধাবিতে যখন যাচ্ছে তখন তারা তাদেরকে ইমিগ্রেশন ক্রস করতে দিচ্ছে না। এটা নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আমরা এগুলো বন্ধ রেখেছি। তিনি আরো বলেন, হয়তো একটা কোম্পানিতে ৩০০ লোক থাকত। তারা ২০০ কর্মী ছাঁটাই করে দিয়েছে। এর ভেতরে হয়তো বাংলাদেশী ৫০ জন পড়ে গেছে। কিন্তু সেই বাংলাদেশীকে তারা জানায়নি সে তার এমপ্লয়ি নয়। সে যখন আবুধাবিতে ঢুকে যাচ্ছে তখন দেখে যে, সে তার এমপ্লয়ি নয়।

নানা জটিলতার কারণে বিমান এলে শ্রমিকদের ওইভাবে নিচ্ছে না। অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে সিনিয়র সচিব বলেন, সমস্যা সমাধানে আজ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা ৭টায় মিটিং ডেকেছি। বিমান, প্রবাসী কল্যাণ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিলে বৈঠক করার জন্য। তিনি বলেন, যেসব প্রবাসী শ্রমিকের টিকিট কাটা আছে, অথচ যেতে পারেনি বিমান তাদেরকে রিপ্লেসমেন্ট দেবে এবং এর জন্য কোনো পয়সা নেবে না। আমরা আর কি করতে পারি? এখন এই বিষয়ে ভালো ভূমিকা রাখতে পারে প্রবাসী কল্যাণ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিমান তো একটা ক্যারিয়ার। দেখা যাক ওনাদেরকে বিষয়গুলো আবার বলি। আমরাও চাই প্রবাসী ভাই বোনেরা ঠিক মতো আসা যাওয়া করুক। গতকাল বিকেলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোকাব্বির হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোন ধরেননি।

জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান এ প্রসঙ্গে বলেন, দু’টি ফ্লাইটে ৩৩৪ জন শ্রমিক আবুধাবি গিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে ১১২ জন ফেরত এসেছে। যেদিন শ্রমিকরা ফেরত আসে সেদিনই কিন্তু প্রবাসী কল্যাণ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী এসব কর্মীর সমস্যা সমাধান করার জন্য দ্রুত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেন। এর জন্য আমি বায়রার পক্ষ থেকে তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। তিনি বলেন, দূতাবাসের মাধ্যমে শ্রমিকের স্পন্সরদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের একটা পথ বের হবে বলে আমি আশা করছি।

এর আগে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান  বলেছিলেন, এখানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কোনো গাফিলতি নেই। তদন্তে যেটা আসছে তা হচ্ছে, আবুধাবি ইমিগ্রেশন সিস্টেমের অস্বচ্ছতা এবং তারা যে পরিবর্তন আনছেন সেই পরিবর্তনটা ঠিকমতো কর্ণসার্ন এজেন্সিগুলোকে ফোন করে বলেননি। যার জন্য এই কনফিউশনটা হয়। এখানে শুধু বিমান না একই অবস্থা হয়েছে এয়ার অ্যারাবিয়ার ফ্লাইটের যাত্রীদের ক্ষেত্রেও। দেশে ফেরত আসা ১১২ শ্রমিকের মধ্যে বিমানের ৬৮ আর এয়ার অ্যারাবিয়ার ৪৪ জন যাত্রী ছিলেন।

উল্লেখ্য ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং এয়ার অ্যারাবিয়ার ফ্লাইটে মোট ৩৩৪ জন যাত্রী গন্তব্য রওনা হয়েছিলেন গত মাসের ১৭ আগস্ট। এর মধ্যে আবুধাবি ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ১১২ জনকে ঢোকার অনুমতি না দিয়ে ফেরত পাঠান। পরে ফেরত আসা যাত্রীরা ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমেই পুনরায় তাদেরকে আবুধাবি পাঠানোর দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের বুঝিয়ে পরবর্তী ফ্লাইটে পাঠানো হবে এমন আশ্বাস দিয়ে যার যার বাসায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। ওই দিন রাতেই প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। এরপর গত সপ্তাহে (বুধবার) তদন্ত কমিটির উপস্থিতিতে প্রতিবেদনের সার সংক্ষেপ তুলে ধরেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান। সূত্র: নয়া দিগন্ত