জাবি ভিসির পক্ষে অভ্যুত্থান নয় পশুত্বের অভ্যুত্থান হয়েছে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের বর্বোরচিত হামলাকে গণঅভ্যুত্থান বলায় জাবি ভিসি ফারজানা ইসলামের প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান। বুধবার ভিসি অপসারণের দাবিতে আয়োজিত সংহতি সমাবেশে তিনি বলেন,‘গতকাল দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনের ওপর ছাত্রলীগের হামলাকে ভিসি ফারজানা ইসলাম নিলর্জ্জের মতো গণঅভ্যুত্থান বলেছেন কিন্তু দেশবাসী দেখছে কিভাবে ছাত্রলীগ হামলা করেছে। কার্যত ভিসির পক্ষে গণঅভ্যুত্থান নয় পশুত্বের অভ্যুত্থান হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমার মনে হয় একজন সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম অভ্যুত্থানের সংজ্ঞাই জানেন না। তাহলে এমন বর্বর হামলাকে কিভাবে তিনি গণঅভ্যুত্থান বলেন? তিনি কিভাবে হামলার জন্য ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ জানান। আসলে সরকার প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের একনিষ্ঠ গোলামী করতে পারা অথর্ব লোকদের দায়িত্ব দিয়ে থাকেন। সেই ভিসিরা সরকার ও ছাত্রলীগের তল্পিবাহক হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান জাহাঙ্গীরনগরের দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনকে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন বলে দাবি করেন।
সমাবেশে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন,‘জাহাঙ্গীরনগরে চাঁদা দাবির জন্য ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি বাতিল হয়ে গেল অথচ যেই ভিসি জাবি ছাত্রলীগকে সরাসরি চাঁদা দিয়েছেন তার পতন বা অপসারণ হচ্ছে না। যারা টাকা নিয়ছে তারাও ছাত্রলীগের পদে আছে। তিনি আরো বলেন,‘এ আন্দোলন ভিসি বিরোধী আন্দোলন ছিল না,ভিসির নিজের কর্মকাণ্ডতেই তার পতন অনিবার্য করেছ। আমরা সরকারকে বলতে চাই, জাবিতে সরকারের ভিসি নিয়োগটা ভুল ছিল, এখন সেই ভিসিকে অপসারণ করে ভুল শুধরে নিতে হবে।’
কয়েকজন আন্দোলনকারী বলেন,ভিসি ছাত্রলীগ ও শিক্ষকদের দিয়ে যে হামলা করেছে তার জন্য শুধু ভিসিকে পদত্যাগ করলেই হবে না।তাকে (ভিসি) হামলার জন্য ফৌজদারি আদালতের মুখোমুখি হতে হবে।
বেলা সাড়ে এগারটা থেকে বিকাল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত সংহতি সমাবেশে জাবির কয়েকশ শিক্ষার্থী ও অর্ধশত শিক্ষক অংশগ্রহন করে। সংহতি সমাবেশে এসে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অনিক রায়, ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী নাসির উদ্দিন প্রিন্স এবং ছাত্রফ্রন্ট (মাক্সবাদী) সেক্রেটারী রাশেদ শাহরিয়ার এবং ছাত্রমৈত্রীর নেতা ইকবালসহ আরো অনেকে। এসময় বিগত আন্দোলনের ছাত্রলীগের হামলা ও বিভিন্ন সময় প্রশাসনের মামলার শিকার বর্তমান ও সাবেক নেতারা নিজেদের ব্যক্তব্য রাখেন।
সংহতি সমাবেশে কলা অনুষদের বর্তমান ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসেন এবং সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহাসহ অনেক শিক্ষক অংশ নেয়।
বিকাল চারটার দিকে ‘দুর্নীতি বিরোধী জাহাঙ্গীরনগরের’মুখপাত্র অধ্যাপক রাইহান রাইন বক্তব্যের মাধ্যমে সমাবেশ শেষ হয় এবং ঘোষণার আলোকে বিকালে একটি মিছিল নিয়ে আবারো ভিসির বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করা হয়। ভিসির বাসভবনের সামনে যেখানে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে সেখাইনে বসে বিক্ষোভ সমাবেশ করছে আন্দোলনকারীরা। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে ভিসির বাসভবন এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আরো পুলিশ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এর আগে সকালে একটি বিক্ষোভ মিছিল ক্যাম্পাসের বিভিন্ন রাস্তা ও হলসংলগ্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনার হয়ে সমাবেশে এসে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলে আন্দোলনকারীরা অন্যায়ভাবে বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদ করেন এবং যতই বাধা আসুক হলে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।
এদিকে বিকালে প্রোভাস্ট কমিটির মিটিংযে সিদ্দান্ত হয়,সর্বশেষ বিকাল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে হল ছাড়তে হবে এবং প্রশাসন ওই সময়ের মধ্যে হর খালি করে দিবে। এছাড়াও প্রভোস্ট কমিটির মিটিংয়ে হল ও হল সংলগ্ন সকল দোকান নতুন ঘোষণা না আসা পর্যন্ত বন্ধ করাতে বলা হয় এবং গতকাল রাতে যেসকল হলের গেইট ভেঙ্গে মেয়েরা আন্দোলনে নেমেছে সেই হলগুলোর গেইট মেরামতের জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রভোস্ট কমিটি।