গুমের শিকার আবদুল্লাহিল আমান আযমীর মুক্তি মিলবে কবে?
বিশেষ প্রতিনিধি: আবদুল্লাহিল আমান আযমী। তিনি একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ও জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর প্রয়াত গোলাম আযমের ছেলে। আমান আযমী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাকে বাধ্যতামূলক চাকরিচ্যুত করা হয়। তিনি গোলাম আযমের চতুর্থ সন্তান।
গত ২২ আগস্ট ২০১৬ ইং তারিখ রাত পৌনে ১২টার দিকে রাজধানী ঢাকার রমনা থানার বড় মগবাজারস্থ ১১৯/২ কাজী অফিস লেনের বাসা থেকে সাদা পোশাকে আইন শৃংখলা বাহিনী পরিচয়ে তাকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। আজও তার খোঁজ কোথাও পাওয়া যায়নি। পরিবারের সদস্যরা আজও আযমীর অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছেন। ছেলের চিন্তায় ও কবে ফিরে আসবে এমন অপেক্ষায় থাকতে থাকতে বৃদ্ধ মা’ও ইতোমধ্যে মারা গেছেন।
আবদুল্লাহিল আমান আযমীর ভাই সালমান আল-আযমী জানান, তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তিনি রাজনীতিতেও জড়িত না। কখনো আইন ভঙের কোনো ঘটনা ঘটাননি। অথচ আইনের কোনো তোয়াক্কা না করেই তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তুলে নেয়ার পর গুম করা হয়েছে। এ ধরনের অবিচার একটি ঘৃণ্য ও ভয়ংকর কাজ এবং এটি মানবাধিকারের চরমতম লংঘন। তিনি আরও জানান, ডিবি পুলিশের ৩০/৩৫ জনের মতো সদস্য পোশাকে হাজির হয়ে ব্রিগেডিয়ার আযমীকে জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে যায়। এসময় তার স্ত্রী ও শিশু সন্তানরা কাঁদছিলেন। চার বছরের নিচে তার দুটি সন্তান রয়েছে। শুধুমাত্র তার বাবা গোলাম আযম বিরোধী দলের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় তার ভাইকে শেখ হাসিনার সরকার যখনি ক্ষমতায় এসেছে তখনি প্রমোশনে বাঁধা দিয়েছে। তাকে টপকে তার জুনিয়রকে প্রমোশন দিয়েছে। এটা ক্ষমতার দৃর্বৃত্তায়ন।
আবদুল্লাহিল আমান আযমীর বাড়ির কেয়ার টেকার আজাদ জানান, ‘আমি রাত নয়টার দিকে হাসপাতাল থেকে বাড়ির সামনে আসি। তখন গোয়েন্দা পুলিশ এসে আমার কাছে জানতে চান আব্দুল্লাহিল কোথায়। আমি কিছু জানি না বলাতে তারা আমাকে বেধড়ক পেটায়। গলির ভেতর প্রায় ২০টি মাইক্রোবাসে ৩০ জনের মত গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এসেছিল। পরে তারা রাত এগারোটার দিকে তাকে (আবদুল্লাহিল আমান আযমী) আটক করে নিয়ে যায়। ওই গাড়ি বহরের সাথে একটি মোবাইল জ্যামারবাহী গাড়িও ছিল।
তিনি আরও জানান, ‘চলে যাওয়ার সময় গোয়েন্দা পুলিশেরা আমাকে দেখিয়ে দিতে বলে, এই ভবনের আশেপাশে কোথায় কোথায় সিসি ক্যামরা আছে। আবদুল্লাহিল আমান আযমীর বাসায় সিসি ক্যামেরা ছিল না। কিন্তু মহল্লার গলিতে নিরাপত্তা ক্যামেরা ছিল। সেগুলো ডিবি পুলিশ খুলে নিয়ে গেছে।’
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্যমতে, ২২ আগস্ট রাত ১১টার দিকে ঢাকার বড় মগবাজার কাজী অফিস গলিতে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা গোলাম আযমের বাড়ি ঘিরে ফেলে এবং গলিতে মানুষের চলাচল বন্ধ করে দেয়। একপর্যায়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাড়ির গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে।
আশপাশের বাসিন্দারা জানান, ওই বাসার ভেতর তখন তারা চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ শুনতে পান। পরে আমান আযমীকে বাসা তেকে তুলে নিয়ে দ্রুত গাড়িতে তোলা হয়। এরপর একটি গাড়ির বহর ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
তিনি সর্বজন স্বীকৃত দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় গভ: ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের ছাত্র ছিলেন। ১৯৭৪ সালে স্কলারশীপ নিয়ে এস,এস,সি পাশ করেন এবং ঢাকা নটরডেম কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হন। একাদশ শ্রেণীতে অধ্যয়নকালে ১৯৭৫ সালে তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে গমন করেন। পরে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেষ্টার শহরে অবস্থিত নর্থ ট্রাফোর্ড কলেজ অব ফারদার এডুকেশন থেকে ও লেভেল পাশ করেন। এরপর তিনি স্ট্যান্ডফোর্ড কলেজ অব টেকনোলজিতে এ লেভেল এ ভর্তি হন। এ লেভেল অধ্যায়নকালে ১৯৭৮ সালের জুলাই মাসে তার বাবা বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করার পর পারিবারিক সিদ্ধান্তে ১৯৭৮ সালে অক্টোবর মাসে তিনি বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৭৯ সালে তিনি ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন র্যাঙ্কে পঞ্চম বি, এম, এ লং কোর্সে যোগদানের জন্য নির্বাচিত হন। ১৯৮০ সালের ১লা ফেব্রুয়ারী তিনি বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমী, ভাটিয়ারী চট্টগ্রামে পঞ্চম বি, এম, এ লং কোর্সে জেন্টেলম্যান ক্যাডেট (জি, সি) যা প্রশিক্ষার্থী অফিসারদেরকে অভিহিত করা হয়, হিসাবে যোগদান করেন। ১৯৮১ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সেকেন্ড লেফট্যানেন্ট হিসাবে কমিশন লাভ করেন। তার এই দুই বৎসর প্রশিক্ষনকালীন কৃতি ক্যাডেটদের জন্য দেয় র্যাঙ্ক ল্যান্স কর্পোরাল ও কর্পোরাল পদে দায়িত্ব পালন করেন। ফাইনাল টার্মে একাডেমিক ক্যাডেটদের জন্য প্রদত্ত সর্বশ্রেষ্ঠ এ্যাপয়েন্টমেন্ট, ব্যাটালিয়ন সিনিয়র আন্ডার অফিসার (বি, এস, ইউ, ও) এর দায়িত্ব পালন করেন। দুই বছরের ট্রেনিং শেষে কমিশন প্রাপ্তির সময় তিনি বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমীর সর্বকালের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে পাঁচটি পুরস্কারের মধ্যে শ্রেষ্ঠ তিনটি পুরস্কার অর্জন করেন। তার অর্জিত পুরস্কার সমূহ হল :
১। সর্ব বিষয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ জি.সি হিসাবে প্রেসিডেন্ট এ্যাওয়ার্ড যা সোর্ড অব অনার হিসাবে পরিচিত।
২। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৮১ সালে ডিগ্রী পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় কলা বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণ পদক এবং
৩। রণকৌশল ও সামরিক যুদ্ধ বিদ্যায় শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শনের জন্য ট্যাকটিকস প্ল্যাক।
সেই সময়ে বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমীর প্রধান ছিলেন তৎকালীন বিগ্রেডিয়ার জে: পরবর্তীতে মেজর জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত আব্দুস সালাম যিনি বর্তমান সরকার দলীয় সংসদ সদস্য। ঐ সময় আরো ছিলেন তৎকালীন মেজর পরবর্তীতে মেজর পরবর্তী মে. জে. (অব:) সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাস যিনি বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ভাই এবং বাংলাদেশের প্রথম ফোর স্টার জেনারেল সেনাপ্রধান জনাব মঈন উদ্দিন আহমেদ।
তার কমিশন লাভ করার পর ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থিত সপ্তম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিম্যান্ট জানুয়ারী ১৯৮২ তে যোগদান করেন। ১৯৮২ সালের জানুয়ারী থেকে ১৯৮৪ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত তার ইউনিটের সাথে ঢাকা সেনানিবাসে চাকুরীর পর জানুয়ারী ১৯৮৪ তে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলার মাইনীমুখ এলাকায় সন্ত্রাস দমন অভিযানে মোতায়েন হন। তার ঢাকায় দুই বৎসর চাকুরীকালীন ১৯৮২ সালের ২৪ শে মার্চ বাংলাদেশে সামরিক শাসন জারি হয়। সেই সময় হতে আমার ঢাকার পুরো অবস্থান তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন, রেডিও বাংলাদেশ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবস্থিত মার্শাল ল’ কন্ট্রোল রুম এর দায়িত্ব পালন সহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। উল্লেখ করা যেতে পারে এ দায়িত্ব পালনকালীন ১৯৮৩ সালে সম্ভবত ১৪ই ফেব্রুয়ারী সামরিক কর্তৃপক্ষ অনেক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করে। তিনি তখন তার কোম্পানীর সৈনিকগণসহ হেয়ার রোডে অবস্থিত (যেখানে এখন সুগন্ধা অবস্থিত) আর্মি ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ অবস্থায় বর্তমান সরকারের তিনজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে আটককৃত অবস্থায় তার তত্ত্বাবধানে কয়েকদিনের জন্য রাখা হয়। ঐ তিনজন নেত্রী হলেন বাংলাদেশের বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ, জাতীয় সংসদ এর সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। ১৯৮৪ সালের জানুয়ারী থেকে ১৯৮৮ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সময়কালে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন পর্যায়ে কমান্ডার এবং ব্রিগেড সদরে অপারেশন স্টাফ অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়কালের মধ্যে ১৯৮৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত মাইনীমুখ এলাকায় ১৯৮৫ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৮৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বান্দরবন এলাকায় সদর দফতর ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের জেনারেল স্টাফ অফিসার- এ (অপারেশন) এবং অক্টোবর ১৯৮৭ থেকে এপ্রিল ১৯৮৮ পর্যন্ত রাঙ্গামাটি জেলায় কাপ্তাই উপজেলার রাজস্থলী এলাকায় ২৩ ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের কোম্পানী অধিনায়ক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডে দায়িত্ব পালনকালীন তার উপরস্ত কর্মকর্তা ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পরবর্তীতে মেজর জেনারেল (অবঃ) সুবিদ আলী ভুইয়া যিনি এখন আওয়ামী দলীয় সংসদ সদস্য। ১৯৮৮ সালের এপ্রিল মাসে আমি ২৩ ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাথে রাজস্থলি এলাকা হতে সৈয়দপুর সেনানিবাসে গমন করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালের মাঝামাঝি থেকে ১৯৯৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, তিনি সিলেটে অবস্থিত জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্টে স্কুল অব ইনফ্যানটরি এন্ড ট্যাকটিস এর কৌশল শাখায় সময়িক যুদ্ধবিদ্যার প্রশিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি ১৯৯০ সালে আমেরিকাতে উচ্চতর সাময়িক প্রশিক্ষণের জন্য যান এবং এ্যায়ারবোর্ন বা প্যারাটুপার কোর্স এবং ইনফেন্টারী অফিসার এ্যাডভান্স কোর্স অত্যন্ত সফলতার সাথে সম্পন্ন করেন।
১৯৯২ সালে মিরপুর সেনানিবাসে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজে মেজর পদবীতে তিনি স্টাফ কোর্স অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে সম্পন্ন করেন। এই স্টাফ কোর্স কৃতিত্বের জন্য ১৯৯৩-৯৪ সালে তাকে মালয়েশিয়ান আর্মস ফোর্সেস স্টাফ কলেজে দ্বিতীয়বারের মত স্টাফ কোর্সে প্রেরণ করা হয়। তিনি সেই কোর্সে অত্যন্ত ভাল ফলাফল করে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেন। উল্লেখ্য মীরপুর স্টাফ কলেজে ফলাফলে যারা প্রথম দিকে অবস্থান করে তাদেরকে বিভিন্ন বন্ধুরাষ্ট্রে দ্বিতীয়বারের মত স্টাফ কোর্স সম্পন্ন করানোর জন্য পাঠানো হয়। এর উদ্দেশ্য হলো মীরপুর স্টাফ কলেজের প্রতিবছর বন্ধুরাষ্ট্র থেকে ৩০/৪০ জন বিভিন্ন বাহিনীর সশস্ত্র বাহিনীর অফিসারগণ প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য আসেন। বাংলাদেশের যেসমস্ত অফিসারদেরকে স্টাফ কোর্স করাকালীন বিদেশী অফিসারদের প্রশিক্ষক হিসাবে উপযুক্ত মনে করা হয় কেবল মাত্র তাদেরকেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দ্বিতীয়বারের মত কোন বন্ধুরাষ্ট্রে দ্বিতীয় স্টাফ কোর্স সম্পন্ন করার জন্য প্রেরণ করে। মালয়েশিয়া থেকে স্টাফ কোর্স সম্পন্ন করে ১৯৯৫ সালে তিনি পুনরায় জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্টে স্কুল অব ইনফ্যান্ট্রি এন্ড ট্যাকটিসের গবেষণা ও উন্নয়ন শাখা (রিচার্স এন্ড ডেভলপমেন্ট শাখা) স্টাফ অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক হিসাবে তিনি ইউনাইটেড ন্যাশন অবজার্ভার মিশনস ইন জর্জিয়াতে যোগদান করেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যে সেখানে ১৭ টি দেশের ১২৭ জন অফিসারের মধ্য হতে তাকে ডেপুটি চীপ অপারেশন অফিসার হিসাবে মিশন সদর দফতরে একজন সুইডিশ জেনারেলের অধীনে ন্যাস্ত করা হয়। জাতিসংঘ মিশনে দায়িত্ব সফলতার সাথে পালন শেষে ১৯৯৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি দেশে ফিরেন। সেই মাসেই পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলা ৬ ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপঅধিনায়ক হিসাবে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯৯৮ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তিনি সেই দায়িত্ব পালন করেন। এই সময় তার পরিবার প্রাথমিক পর্যায়ে কাপ্তাই সেনানিবাসে অবস্থানরত থাকলেও পরবর্তীতে তিনি তাদেরকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে অবস্থিত সরকারি বাসবভনে স্থানান্তর করেন। এ সময়ে তার জীবনের একটি অত্যন্ত বেদনায়দক ঘটনা ঘটে। ১৯৯৮ সালের ১৪ই এপ্রিল যে দিন ১লা বৈশাখ তার বাবা-মা আমার অসুস্থ স্ত্রী এবং অসুস্থ শিশু সন্তানকে দেখতে যান সেই সময় চট্টগ্রাম সেনানিবাসে সদর ১৪ পদাধিক ডিভিশনে সদর দফতরে তাকে ডেকে নিয়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান মরহুম জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান চট্টগ্রামের জিওসি মেজর জেনারেল (অবঃ) ফজলুল কবিরকে নির্দেশ প্রদান করেন যে, তার বাবা সরকারি বাসভবনে থাকতে পারবেন না এবং তাকে চাকুরীর ভয় দেখিয়ে তার বাবাকে বাসা থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়। তারমতে, তার বাবা বাংলাদেশের একজন নাগরিক। সেসময় ওনার বিরুদ্ধে কোন মামলা ছিল না। তার বাবা সেনানিবাসে যেতে পারবেন না মর্মে আমাকে কখনো লিখিত বা মৌখিক কোন আদেশ কোন দিনই কোন কর্তৃপক্ষ দেন নাই। বরঞ্চ আমার বান্দরবানে চাকুরী করাকালীন ১৯৮৭ সালে তার বাবা তার সরকারি বাসভবনে বেড়াতে গেছেন। ১৯৯০ বা ১৯৯১ সালে তার বাবা তার জালালাবাদ সেনানিবাসের বাসভবনে বেড়াতে গেছেন। কখনো কোন অসুবিধা হয়নি। কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল না। ১৯৯৮ সালে তার সাথে ঐ অমানবিক আচরণের একটাই কারণ দৃশ্যমান তা হলো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল এবং তার বাবার প্রতি বিদ্বেষের কারণে তার সাথে এ রকম আচরণ করা হয়।