খোকার আক্ষেপ ছিল বাংলাদেশের পাসপোর্ট না পাওয়া

November 05 2019, 05:16

বাংলাদেশ সরকার পার্সপোর্ট নবায়ন না করায় এখন বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার মৃত্যুর পর ট্রাভেল ডকুমেন্টের মাধ্যমে নিউইয়র্ক থেকে মৃতদেহ ঢাকায় আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

পরলোকগত এই রাজনীতিকের পরিবারের একজন সদস্য জানিয়েছেন, ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য নিউইয়র্কে থাকার সময় সাদেক হোসেন খোকা এবং তার স্ত্রীর পাসপোর্ট নবায়নের জন্য সেখান থেকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছিল দুই বছর আগে।

কিন্তু সরকার তা নবায়ন না করায় তিনি অসুস্থতার শেষ দিকে দেশে আসতে চাইলেও পারেননি বলে তার পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।

এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তার লাশ দেশে আনার ব্যাপারে সরকার সহযোগিতা করছে।

বিএনপি নেতা এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ফুঁসফুসের ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য নিউইয়র্ক গিয়েছিলেন ২০১৪ সালের মে মাসে।

এই পাঁচ বছর ধরে তিনি সেখানেই অবস্থান করছিলেন।

সপ্তাহ দুয়েক আগে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ম্যানহাটনের একটি ক্যান্সার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেই হাসপাতালেই সোমবার তার মৃত্যু হয়।

তার শ্যালক শফিউল আজম খান নিউইয়র্ক থেকে বিবিসিকে বলেছেন, সাদেক হোসেন খোকার ইচ্ছা অনুযায়ী তার পরিবার লাশ ঢাকায় নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু জটিলতা দেখা দেয় পাসপোর্ট না থাকার কারণে।

ট্রাভেল ডকুমেন্টের ব্যবস্থা হচ্ছে
খান বলেছেন, নিউইয়র্কে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ট্রাভেল ডকুমেটন্টস নিয়ে লাশ দেশের নেয়ার ব্যবস্থা তারা করছেন।

“ওনার অন্তিম ইচ্ছা এবং উনি এটা বলেও গেছেন যে, ওনার বাবা-মায়ের কবরের পাশে ঢাকার জুরাইন কবরস্থানে যেন তাকে দাফন করা করা হয়। সেই ব্যবস্থাই পরিবার থেকে করা হচ্ছে।”

সাদেক হোসেন খোকার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, খোকা এবং তার স্ত্রীর পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হলে গত ২০১৭ সালে তা নবায়নের জন্য নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনে আবেদন করা হয়েছিল।

কিন্তু দুই বছরে বাংলাদেশ সরকার তাদের পার্সপোর্ট দেয়নি। এনিয়ে সাদেক হোসেন খোকা জীবনের শেষ দিকে পরিবারের সদস্যদের কাছে আক্ষেপও করেছিলেন বলে তার পরিবারের একজন সদস্য বলেছেন।

পরিবারের ধারণা, দুর্নীতির মামলায় সাজা হওয়ার কারণে পাসপোর্ট নবায়ন করা হয়নি।

ঢাকা মেয়র ভবন। সাদেক হোসেন খোকা অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের শেষ নির্বাচিত মেয়র ছিলেন।

‘পাসপোর্ট নাগরিকের অধিকার’
তবে সুপ্রিমকোর্টের একজন আইনজীবী ফাহিমা নাসরিন বলছিলেন, কোনভাবেই একজন নাগিরককে তার পাসপোর্ট পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না।

“দুর্নীতির মামলা হোক বা সাজা হোক, কোনো নাগরিককে তার পাসপোর্ট থেকে বঞ্চিত করা যায় না। রাষ্ট্র এটা বলতে পারে না যে, আমি একজনের বাংলাদেশের নাগরিকের পাসপোর্ট দেবো না বা আটকে রাখবে।”

সাদেক হোসেন খোকা পাঁচ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর পরই তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কয়েকটি মামলায় সাজা হয়।

বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গেরিলা বাহিনীর অন্যতম সদস্য ছিলেন সাদেক হোসেন খোকা। কিন্তু রাজনৈতিক কারণেই জীবনের শেষ সময়েও তাকে পার্সপোর্ট দেয়া হয়নি এবং সেখানে একটা আক্ষেপ থাকতে পারে বলে দলটির নেতারা অভিযোগ করেছেন।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সামাজিক মাধ্যমে রোববার লিখেছিলেন যে, সাদেক হোসেন খোকার পরিবার চাইলে তাদের ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিয়ে সরকার সহযোগিতা করবে।

সাদেক হোসেন খোকার পরিবারের একজন সদস্য জানিয়েছেন, খোকার মৃত্যুর পর তাদের ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিয়ে সহযোগিতা করার কথা জানিয়েছে সেখানকার বাংলাদেশ মিশন।

এদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, পাসপোর্ট নবায়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না। তবে নবায়ন না করার বিষয়টি সমর্থনযোগ্য নয় বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন।

“পাসপোর্ট দেয়া বা নবায়ন করা-এরসাথে রাজনীতির কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। রাজনৈতিক দলেরও এতে কোনো দায়িত্ব নেই। যারা এসব অধিদপ্তরের সাথে জড়িত, তারা ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারবে। তবে পাসপোর্ট নবায়ন না করাটা দুঃখজনক এবং অনৈতিক বলে আমি মনে করি।”

পাসপের্ট নবায়ন না করার বিষয়ে বা কারণ সম্পর্কে পররাষ্ট্র এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো বক্তব্য দেননি।

সাদেক হোসেন খোকা অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের শেষ নির্বাচিত মেয়র ছিলেন। ঢাকার সূত্রাপুর কোতোয়ালি আসন থেকে তিনি তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিএনপি সরকারের সময়ে তিনি মন্ত্রীও ছিলেন।
সূত্র : বিবিসি