কালশীর অগ্নিকাণ্ড : কয়লার মাঝেই শেষ সম্বল হাতড়ে ফেরা

December 28 2019, 04:37

পাঁচ বছরের শিশু জুম্মান। তীব্র শীতে জবুথবু হয়ে আছে শিশুটি। চোখেমুখে অনিশ্চয়তার ছাপ। তুবও আগুনে পোড়া ধ্বংসস্তূপে শেষ সম্বল হাতড়াচ্ছে। বাবা-মায়ের সাথে পুড়ে যাওয়া কয়লার মাঝেই নিজেদের পুড়ে যাওয়া জিনিস খুঁজছে জুম্মান। কিন্তু মধ্যরাতের আগুন সব যে কেড়ে নিয়েছে ওদের। দেখলে মনে হবে আগুনে সব হারানো জুম্মনদের অসহায়ত্বের কাছে ডিসেম্বরের এ তীব্র শীতও যেন হার মেনেছে।

জুম্মানদের পাশেই পুড়ে ধ্বংসস্তূপ থেকে রুটিরুজির একমাত্র অবলম্বন রিকশাটি তুলে আনছেন রফিক, অন্তত লোহালক্কর হিসেবে বিক্রর জন্য। নদী ভাঙনে সব হারিয়ে নতুন জীবনের আশায় ঘর বেঁধেছিলেন কালশীর বাউনিয়া বাঁধ বস্তিতে। ভয়াবহ আগুন মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু কেড়ে নিয়েছে। জুম্মান ও রফিকের মতোই একই অবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত বাকি বস্তিবাসীদের। এক রাতের ব্যবধানেই খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই হয়েছে হতভাগ্য এসব মানুষের। কষ্টে অর্জিত সহায়-সম্বল হারিয়ে কেউ কেউ বাকরুদ্ধ, চোখে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ছাপ।

রাজধানীর মিরপুরের কালশীর বাউনিয়া বাঁধ বস্তিতে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে আগুন লাগে। শীতের রাতে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টির মধ্যেই ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে পড়ে পুরো এলাকা। আগুন আগুন, বাঁচাও বাঁচাও বলে ঘুমন্ত শিশুসন্তানদের পরিবার-পরিজনদের নিয়ে বস্তির খুপড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। নিজেদের মতো করে প্রাণন্তর চেষ্টা চালান আগুন নেভানোর। কিন্তুওই আগুনের কাছে তারা যে বড়ই অসহায়।

জানা গেছে, রাত সাড়ে ১২টার দিকে কালশীর বাউনিয়া বাঁধ বস্তিতে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সময় মতো পৌঁছলেও পানির উৎস খুঁজে না পাওয়ায় আগুন নেভাতে বেশ বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের। রাত সোয়া ২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তাদের ধারণা, অবৈধ বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।

আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে গভীর রাতে কান্নার রোল পড়ে যায় বস্তিবাসীর মধ্যে। এক কাপড়ে বের হয়ে আসা বস্তিবাসী এই শীতের মধ্যে কোথায় আশ্রয় পাবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন তারা। মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে নগরবাসীর একটু উষ্ণতার জন্য চেষ্টার কমতি নেই। এমন তীব্র শীতে সব হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই মিলেছে শত শত বস্তিবাসীর। কারো সমস্যা গরম কাপড়, কারো আবার খাবারের অভাব। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুদের কষ্ট অসহনীয়।