কবে থেকে ফের পেঁয়াজ রফতানি শুরু করবে ভারত?
পেঁয়াজ রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বাংলাদেশ নতুন করে ভারতের কাছে অনুরোধ জানানোর পরও দিল্লি এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে এখনো দ্বিধায় ভুগছে। তবে সে দেশের পেঁয়াজ রফতানিকারকদের অনেকেই জানিয়েছেন, বাজারে এখন নতুন ফসল এসে গেছে এবং দামও অনেকটাই কমেছে-কাজেই এখন আবার রফতানি শুরু করা হলে অসুবিধার কিছু নেই।
তা ছাড়া ভারতের যে মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানায় বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে সরকার দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম নাগালে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল, সেই ভোটপর্বও মিটে গেছে দুদিন আগে।
এই পটভূমিতে ভারত থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি আবার কবে নাগাদ শুরু হতে পারে?
আসামের রাজধানী গৌহাটিতে মঙ্গলবারও এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন, ভারত তাদের দেশে আচমকা না-বলে কয়ে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় তাদের খুবই অসুবিধায় পড়তে হয়েছে।
ওই অনুষ্ঠানে ভারতের একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও আসাম ও ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও হাজির ছিলেন।
তাদের সামনেই টিপু মুনশি আরো জানান, ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলও নাকি তাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের নির্বাচন মিটে গেলেই বাংলাদেশে আবার পেঁয়াজ যাওয়া শুরু হবে।
এদিকে ভারতের শীর্ষ রফতানিকারকরাও কিন্তু মনে করছেন এখন আবার বিদেশে পেঁয়াজ পাঠাতে কোনও বাধা নেই।
ভারতের ‘পেঁয়াজ রাজধানী’ বলে পরিচিত নাসিক থেকে গ্রিবল এগ্রো এক্সপোর্টের রাহুল চৌধুরী বলছিলেন, ‘এখন আবার রফতানি শুরু করা যেতেই পারে – আমাদের ক্রেতারা নেপাল-বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কায় অপেক্ষা করছেন।’
‘প্রয়োজনে একটা এমইপি, অর্থাৎ ন্যূনতম রফতানি মূল্য চালু রাখা হোক, তাতে ক্ষতি নেই।’
‘কিন্তু বাজারে নতুন ফলন এসে গেছে, চাষীদের কাছে এখন মজুতও বিশাল।’
তামিলনাডুর এস এস এক্সপোর্টসের প্রধান ষান্মুগাভেল আবার বলছিলেন, ‘বাজার এখন অনেকটাই পড়ে গেছে – আর তা ছাড়া ২১শে অক্টোবর মহারাষ্ট্রে ভোট হয়ে যাওয়ার পর আমি তো আশা করেছিলাম নিষেধাজ্ঞা এদিনই উঠে যাবে।’
‘বৃষ্টিতে নাসিকের পেঁয়াজ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কর্নাটকের পেঁয়াজ কিন্তু বাজারে চলে এসেছে।’
‘কিন্তু সারাদিন অপেক্ষা করার পরও কোয়েম্বাটোরের ডিরেক্টোরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড থেকে আজও কোনও ঘোষণা এল না,’ বেশ হতাশার সুরেই বলছিলেন তিনি।
বস্তুত গত মাসে একটা সময় ভারতে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে ৫১ রুপি পৌঁছেছিল – যেটা এখন নেমে এসেছে ৩০-৩২ রুপিতে। কিন্তু ভাবনগরের মোদী এক্সপোর্টসের সন্দীপ মোদী আবার মনে করছেন, অসময়ের বৃষ্টিতে পেঁয়াজের বাজারে আবার আগুন লাগতে পারে।
তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘মহারাষ্ট্রে এখন লেট মনসুনের কারণে পেঁয়াজের মান খারাপ হয়ে যেতে পারে, নতুন ফসল উঠতেও দেরি হতে পারে।’
‘খেয়াল করবেন, গত সপ্তাহেই হোলসেলে যে পেঁয়াজ ছিল ২৮ রুপি কেজি, সেটাই কিন্তু আজ ৩৭ রুপিতে পৌঁছে গেছে।’
বস্তুত বাজারে এই ওঠাপড়ার কারণেই কেন্দ্রীয় সরকার রফতানি নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি তুলে নেওয়া নিয়ে সংশয়ে ভুগছে।
তিন সপ্তাহ আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফরের সময় কিছুটা অনুযোগের সুরেই বলেছিলেন, ভারত দুম করে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেওয়ায় তার হেঁশেলেও এখন পেঁয়াজ ছাড়াই রান্না করতে হচ্ছে।
তখন দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার বলেন, ‘পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার মন্তব্য ভারতের নজরে পড়েছে – এবং এই উদ্বেগ কীভাবে প্রশমিত করা যায় সেটাও দেখা হচ্ছে।’
কিন্তু তার পর থেকে ভারত শুধুমাত্র ২৯শে সেপ্টেম্বরের আগে খোলা পেঁয়াজ রফতানির এলসি-গুলোই অনার করেছে – আগে সেটাও তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
তবে সরকারের সেই বক্তব্য সামনে আসার পর তিন সপ্তাহ কেটে গেলেও ভারত এখনও নতুন করে পেঁয়াজ রফতানি চালু করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
এ বিষয়ে সরকারের সংশিষ্ট মহলগুলো শুধু বলছে, পরবর্তী চব্বিশ ঘন্টাতেই এই সিদ্ধান্ত চলে আসতে পারে – আবার চব্বিশ দিন লেগে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
সূত্র : বিবিসি