ওয়াজ মাহফিল নিয়ে সংসদে আ’লীগ-বিএনপির উত্তেজনা

January 30 2020, 15:41

দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারের পক্ষ থেকে ওয়াজ মাহফিলে বাধা দেয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও সরকারি দলের সদস্যদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। বিএনপির সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ এমন অভিযোগ করলে তার ঘোর আপত্তি জানায় সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা।

সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমের উল্লেখ নিয়ে হারুনুর রশীদ ভুল ব্যাখা দিয়েছেন বলেও দাবি করেন সরকারি দলের সদস্যরা। এ নিয়ে বৈঠকে কিছু সময়ের জন্য উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পয়েন্ট অব অনির্ধারিত আলোচনা চলাকালে এই ঘটনা ঘটে। এসময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বৈঠকে সভাপতিত্ব করছিলেন।

ফ্লোর নিয়ে হারুনুর রশীদ আলোচনার সূত্রপাত করতেই সরকার দলীয় সদস্যদের তোপের মুখে পড়েন। হৈ চৈ-এর মধ্যে তার বক্তব্যের কড়া জবাব দেন সরকার দলীয় সদস্য সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ ও বর্তমান হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।

হারুনুর রশীদ বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি সংশোধিত সংবিধানের পূর্বে সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসী হবে এবং যাবতীয় কাজের ভিত্তি এটিই হবে। তবে নতুন সংশোধিত সংবিধান থেকে এটা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম হিসেবে রাখা হয়েছে। সংবিধানের প্রস্তাবনায় পূর্বে ছিলো ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম’, সেটির পরিবর্তে সংযোজিত হয়েছে দয়াময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে/ পরম করুনাময় সৃষ্টিকর্তার নামে। বিষয়টি আপত্তিকর। সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমের প্রকৃত অর্থ সংযোজিত হওয়া উচিত।

তিনি আরো বলেন, কয়েক দিন ধরে সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় একটা বিষয় নিয়ে বির্তক করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন তাফসির মাহফিলে যে আলোচনা হচ্ছে, কোরআন হাদিসের আলোকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন তাফসিরকারকরা আলোচনা করছেন। সেই সমস্ত আলোচনা নিয়ে আপত্তিজনক অসংলগ্ন কথা বার্তা বলা হচ্ছে। এটা ঠিক হচ্ছে না। তিনি বলেন, দেশে হিন্দু-বৌদ্ধ -খ্রিষ্টানরা সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তারা তাদের কর্মকান্ড চালাচ্ছে। অথচ ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা তাফসির মাহফিল করতে গেলে নিষেধাজ্ঞা আসছে। এতে মুসলমানদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে।

তার বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, দেশের সব জায়গায় জেলা-উপজেলা জেলা পর্যায়ে ওয়াজ মাহফিল হচ্ছে, সেখানে আল্লাহ রসুলের কথা বলা হচ্ছে, শুধুমাত্র জামাতিপন্থায় মানুষ যাতে শিক্ষা দীক্ষা না নেয় যাতে দেশটাকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত না করে, সেই দিকটাকে আমরা অনেক সময় বলে থাকি। এক্ষেত্রে ইসলামী কার্যকলাপে কোনো বাধা সৃষ্টি হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, ওনি (হারুন)) জামাতপন্থিদের কথা মতো এখানে কিছু কথা উত্থাপন করেছেন। মুষ্টিমেয় কয়েক জন মানুষ জামাতিদের পক্ষে। দেশের ১৬ কোটি মানুষ তাদের বিরোধীতা করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই দেশকে জঙ্গি রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করা থেকে রক্ষার চেষ্টা চলছে। তবে ইসলাম আছে, ইসলাম থাকবে, বাংলাদেশ চিরদিন মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষা করে চলবে।

হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ওনি সংবিধানের উদ্ধৃতি দিয়ে পূর্বের ন্যায় ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করলেন। তিনি বিসমিল্লাহর ব্যাখা হিসেবে অপব্যাখা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। এটি উদ্দেশ্যে প্রণোদিত এবং তাদের চিরাচরিত একই রাজনীতি। তাদের বলেন, যে ধানের শীষে ভোট দিলে বেহেস্তের টিকিট পাওয়া যাবে, নৌকায় ভোট দিলে ইসলাম থাকবে না, বৌ তালাক হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আগামী পহেলা ফেব্রুয়ারি ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ঢাকার মানুষকে বিভ্রান্ত করতে হঠাৎ এমন একটি বিষয় উত্থাপন করা হয়েছে। যার সঙ্গে সংসদের কার্যক্রমের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আরো বলেন, আমরা ওরশে বোমা হামলা করতে দেইনি। আমরা হযরত শাহজালালের মাজারে বোমা হামলা করতে দেইনি। আমরা ইসলামকে রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। ইসলামের নামে, ধর্মের নামে যারা বিভিন্ন ফতোয়া দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন তাদের বিরুদ্ধে গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে কথা বলছেন।