ঈশ্বরগঞ্জে মিথ্যা মামলার ফাঁদে সাংবাদিক পরিবার
বিশেষ প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে মিথ্যা মামলা দিয়ে এক সাংবাদিক পরিবারকে বাড়ি ছাড়া করতে একটি প্রতারক চক্র উঠেপড়ে লেগেছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয় ভূক্তভোগী পরিবারকে হেনস্থা চক্রটি বিভিন্ন সময় বাড়ি ঘরে হামলাও চালিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের সিভিল কোর্ট কমিশনার, স্থানীয় ভূমি অফিসের পিয়নসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী এর পেছনে জড়িত রয়েছে। অপরদিকে প্রতারণা করে মিথ্যা মামলা, জাল দলিল ও আদালতের সমন গোপন করে একতরফা ডিক্রি করানোর মতো ঘটনার সৃষ্টিও হয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের ফানুর গ্রামের মৃত ইসহাক মিয়ার পরিবারকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করতে একই গ্রামের বাছির উদ্দিন ওরফে বশর উদ্দিন বানোয়াট কাগজ পত্রের মাধ্যমে ঈশ্বরগঞ্জ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা করেন। যার নম্বর ১২৫/১৫ অন্য প্রকার। শুধু তাই নয় বছর উদ্দিন জালজালিয়াতি করে মামলা পরিচালনা করে এই মামলায় একতরফাভাবে ডিক্রীও আদায় করে নেন করেন আদালতের কাছ থেকে। মামলার ডিক্রীর সইমহরী নকলে দেখা যায় যে, ১৫/৩/২০১৭ ইং তারিখে এক তরফা সূত্রে রায় এবং ২২/৩/২০১৭ তারিখে একদরফা সূত্রে ডিক্রি পান বশর উদ্দিন। অজ্ঞাত এই মামলা দেখে মৃত ইসহাক মিয়ার পরিবারের সদস্যরা হতবাক হয়ে যান। এদিকে, ইসহাক মিয়ার মৃত্যুর পরও তার ছেলে-মেয়েরা উল্লেখিত মামলার জমি ভোগ দখল করে আসছিলো। কিন্তু ইতোপূর্বে কখনও বশর উদ্দিন তাদেরকে জমির ব্যাপারে কিছু বলেনি। এমনকি বশর উদ্দিন বহুদিন আগেই এই এলাকা থেকে জমি বিক্রি করে চলে যান অন্যত্র। শুধু তাই নয়, উল্লেখিত মামলার কোনো সমন নোটিশও পায়নি ইছহাক মিয়ার পরিবারের সদস্যরা। অথচ, সইমহরী নকলে দেখা যায়, ইছহাক মিয়ার ছেলে মামুন একটি সমনে স্বাক্ষর করেছেন, যে স্বাক্ষর ইছহাক মিয়ার ছেলে মামুন কখনই দেন নাই এবং যার সাথে মামুনের স্বাক্ষরের সাথে কোনো মিলও নাই। বাস্তবিক অর্থে, সই জাল করে সমন গোপন করার পেছনে বশর উদ্দিনসহ প্রতারক চক্রটির গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে। এদিকে বশর উদ্দিন মামলার ডিক্রি পায়ার পর, স্থানীয় প্রশাসনকে নিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে পাওয়া জায়গা বুঝে নিতে ইছহাক মিয়ার ছেলেদের দখলে থাকা জমিতে গত ০৪/০৪/২০১৯ তারিখে কাগজপত্র দেখানো ছাড়াই জোরপূর্বক দখলে নেন বশর উদ্দিন। শুধু তাই নয়, ঈশ্বরগঞ্জ সিভিল কোর্টের কমিশনার সার্ভেয়ার ফয়সাল আবেদীন ডিক্রিকৃত ৪০ শতাংশ জমি হালদাগ ৬০,৬৯, ৬৮ দাগে না দিয়ে শুধু মাত্র ইসহাক মিয়ার ৬৯ দাগেই দখল বুঝিয়ে দেয়। যা আদালতের নির্দেশের পরিপন্থী। একতরফা সূত্রে বিনা খরচায় যে ডিক্রী হয়েছে তাতে আদালত বলেছেন, হালদাগ ৬০, ৬৯, ৬৮ দাগ থেকে ৪০ শতাংশ জমি বুঝিয়ে দিতে। কিন্তু ফয়সাল আবেদিন আদালতের নির্দেশ তোয়াক্কা করে শুধু মাত্র ইসহাক মিয়ার ৬৯ দাগেই ২০ শতাংশ জমির দখল বুঝিয়ে দেন। যদিওবা একতরফাভাবে আদালত ফানুর মৌজার ৬০, ৬৯, ৬৮ হালদাগ থেকে যথাক্রমে ২০, ১০, ১০ শতাংশ জমির ডিক্রী প্রদান করেন।
অভিযোগে জানা যায়, সার্ভেয়ার ফয়সাল আবেদিন উক্ত জমি বুঝিয়ে দেয়ার পরদিনই আবার ইসহাক মিয়ার বাড়িতে আসে। ইসহাক মিয়ার পরিবারের সদস্যদের কাছে জমি ফিরিয়ে দেয়ার শর্তে ইসহাক মিয়ার পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন। তিনি বলেন, আমি এখনও রিপোর্ট দেইনি। ব্যবস্থা হলে আমি বশর উদ্দিনের বিরুদ্ধে রিপোর্ট দিব। একটি ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, সার্ভেয়ার ফয়সাল আবেদিন কোর্টে এখনও রিপোর্ট দেন নাই জানাচ্ছেন। সেই সাথে, ভুল করে একই দাগে বেশি জমির দখল দিয়েছেন বলেও স্বীকার করছেন। শুধু তাই নয়, জমি বুঝিয়ে দেয়ার সময় উপস্থিত এসিল্যান্ডকে কটাক্ক করে কথাও বলেন তিনি।
এদিকে ইসহাক মিয়ার পরিবারের কাছ থেকে চাঁদা না পাওয়ায় বশর উদ্দিনকে লেলিয়ে দেন দখলকৃত জমিসহ আশপাশের আরো জমি দখলে নেয়ার জন্য। বশর উদ্দিনও ফয়সালের কথা মতো কাজ শুরু করেন। এদিকে ফয়সাল আবেদিনের ইন্দনে সুবিধাভোগী বশর উদ্দিন ইসহাক মিয়ার পরিবারের সদস্যদের প্রতিদিন বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকনে। কখনও দা নিয়ে ইসহাক মিয়ার পরিবারের সদস্যদের তাড়া করেন। আবার কখন ইসহাক মিয়ার ছেলেদের বসতভিটায় গরুর গোবর ছুড়েন। আবার কখনও স্থানীয় দালাল ও প্রতারকদের নিয়ে ইসহাক মিয়ার পরিবারের সদস্যদেরকে ঘর থেকে বের হতে বাঁধা দেন।
এদিকে ইসহাক মিয়ার পরিবারের লোকদের হেনস্থা করতে বশর উদ্দিন বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তার মেয়ে রহিমা খাতুনকে দিয়ে ইসহাক মিয়ার পরিবারের সদস্যদের চাপে রাখতে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়ের করিয়েছেন। যে মামলায় ইসহাক মিয়ার ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন, মাসুদ মিয়া, হোসেন মিয়া ও স্থানীয় তরিকুল ইসলাম, আলী হোসেন, শফিকুল ইসলাম, মো. গেন্দা মিয়া, মো. আবুল হাসেম, জুলহাস মিয়াসহ আরো অজ্ঞাত ১৪/১৫ জনকে আসামী করে। অথচ, মামলায় উল্লেখিত দিন আব্দুল্লাহ আল মামুন নিউইয়র্ক ভিত্তিক অনলাইন বিডিপ্রেস টোয়েন্টিফোর এর বাংলাদেশ অঞ্চলের প্রতিনিধি সম্মেলনে ঢাকায় উপস্থিত ছিলেন। মামুনের ভাই মাসুদ মিয়া মামলায় উল্লেখিত তারিখের আগ থেকেই দুবাইতে অবস্থান করছেন এবং হোসেন মিয়া ঢাকায় একটি বায়িং হাউজ এ কর্মরত ছিলেন। অপরদিকে এই মামলায় ময়মনসিংহের ৪ নং আমলী আদালতের বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে ইসহাক মিয়ার পরিবারের সদস্যদের মান সম্মান নষ্টের উদ্দেশ্যে কতিপয় অসাধু ব্যক্তিদের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছেন ফয়সাল আবেদিনসহ বশর উদ্দিন। সেই সাথে ময়মনসিংহের স্থানীয় দৈনিক আজকের বাংলাদেশ এ ইসহাক মিয়ার ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুনকে জড়িয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করে। আব্দুল্লাহ আল মামুনের বক্তব্য না নিয়ে একতরফা সংবাদ প্রকাশ করার ক্ষেত্রে আজকের বাংলাদেশ নামীয় পত্রিকাটি তার সম্পাদনা ও প্রকাশনা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়েছে। যা সম্পাদকীয় নীতির পরিপন্থী এক জঘন্য কাজ।
এব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান(ভারপ্রাপ্ত) আনছারুল বলেন, ’’ আদালত ঘটনা সম্পর্কে ২ ডিসেম্বরের মধ্যে তদন্ত চেয়েছে। ৩/৪ দিনের মধ্যেই তদন্ত সম্পন্ন করবো। সুষ্টু ও নিরপেক্ষ তদন্ত প্রদান করতে সচেষ্ট হব।’’