ইরান ও ইরাকে জুম্মার নামাজ বাতিল

March 07 2020, 05:29

মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ সংক্রমণ আরো বেশি করে ছড়িয়ে পড়ছে। ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের কিছু শহরে জুম্মার নামাজ বাতিল করা হয়েছে।

ইরানের কয়েকটি শহর এবং ইরাকের কারবালায় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে শুক্রবারের নামাজ বাতিল করা হয়।

সৌদি আরবের মক্কা ও মদিনা শহরে দুই পবিত্র মসজিদ বন্ধ করে দিয়ে জীবাণুমুক্ত করার কার্যক্রম চালানোর পর এখন তা আবার খুলে দেয়া হয়েছে – কিন্তু সেখানে প্রবেশের ওপর কড়া বিধিনিষেধ এখনো বহাল আছে।

সৌদি কর্তৃপক্ষ এর আগে বুধবার সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে ওমরা হ্জ স্থগিত করে। তারও আগে বিদেশীদের জন্য মক্কা ও মদিনায় যাওয়া বন্ধ করে দেয়া হয়।

আফ্রিকা মহাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ায় মিশরে। মিশরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, লাক্সর-আসওয়ান নৌভ্রমণে থাকা একটি প্রমোদতরীর ১২ জন যাত্রীর দেহে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। এ নিয়ে মিশরে সংক্রমিতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫ তে।

মনে করা হচ্ছে এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ইরানেই প্রথম ব্যাপক আকারে করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেবার পর – সেখান থেকেই এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যের আরো কয়েকটি দেশে।

ইরানের সাথে সংশ্লিষ্ট কারণে ভাইরাস ছড়ানোর খবর পাওয়া গেছে যে সব দেশে তার মধ্যে আছে, সৌদি আরব, ইরাক, আফগানিস্তান, বাহরাইন, লেবানন, পাকিস্তান, কুয়েত, ওমান, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত।

ইরাকে নিশ্চিত করা হয়েছে অন্তত দুজনের মৃত্যুর খবর। ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলীয় পবিত্র শহর কারবালায় শুক্রবারের নামাজ বাতিল করেছে শিয়া ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ।

কর্তৃপক্ষ বলছেন, বিরাজমান স্বাস্থ্য পরিস্থিতির কথা ভেবে এবং শহরের স্বাস্থ্য বিভাগের আহ্বান বিবেচনায় নিয়ে তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ইরান ও ইরাকের বিভিন্ন শহরে কমিয়ে দেয়া হচ্ছে অফিসের সময়, বন্ধ রাখা হচ্ছে স্কুল-কলেজ সিনেমা এবং ক্যাফে-রেস্তোরাঁর মতো জনসমাগমের স্থানগুলো।

ইরানে প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো যেমন স্থগিত করা হয়েছে, তেমনি ইরাক ও ফিলিস্তিনি এলাকাতেও আরোপ করা হয়েছে নানা রকমের বিধি-নিষেধ।

ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষও বেথলেহমকে শহরকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ইরানেই এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। সরকারি হিসেবেই মারা গেছেন একশো জনেরও বেশি।

বলা হচ্ছে, চীনের বাইরে ইরানেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ করোনাভাইরাসের শিকার হয়েছে।

ইরানের একটি প্রদেশে লোকজনের ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোতে বলা হচ্ছে, এজন্যে প্রধান প্রধান সড়কে পুলিশ ও রেভ্যুলুশনারি গার্ডের সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

ইরানের ভেতরে প্রত্যেকটি প্রদেশেই করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এটি যাতে আরো ছড়িয়ে পড়তে না পারে এখন সেই চেষ্টাই করছে কর্তৃপক্ষ।

ইতোমধ্যেই সব স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, নববর্ষ নওরোজের ছুটি শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। ইরানের অফিসে আদালতে কাজের সময়ও অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। প্রায় একই ধরনের ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে উপসাগরীয় আরো কয়েকটি আরব দেশেও।

সৌদি আরবের মক্কা ও মদিনা শহরে পবিত্র দুটো মসজিদ জীবাণুমুক্ত করার পর সেগুলো আবার খুলে দেওয়া হয়েছে। হজযাত্রীরা ওই দুটো শহরে অবস্থান করতে পারলেও তাদেরকে ওই দুটো মসজিদে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।

বিশেষ করে রাজধানী তেহরানের উত্তরে গিলান প্রদেশে লোকজনকে সারা দেশে ভ্রমণের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এজন্যে দেশটির প্রধান প্রধান সড়কে বসানো হয়েছে নিরাপত্তা চৌকি।

শুধুমাত্র জরুরি কাজে বিশেষ করে খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি বহনকারী লরি ছাড়া অন্য কোন পরিবহনকে এক শহর থেকে আরেক শহরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। বিবিসি।