ইকবালের কবিতা আবৃত্তি নিয়ে বরখাস্ত শিক্ষক
আল্লামা ইকবালের যে কবিতা নিয়ে বিতর্ক তুলে বরখাস্ত করা হয়েছে পিলভিটের শিক্ষক ফুরকান আলিকে, সেই কবিতাটি দেশাত্মবোধক এবং স্কুলের সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত। স্কুলের হেডমাস্টার ফুরকান আলিকে বরখাস্ত করা যে ভুল হয়েছে, সেটা স্বীকার করে নিয়ে ভারতের উত্তরপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী সতীশচন্দ্র দ্বিবেদি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কাছে মন্তব্য করেছেন, ভালোভাবে খোঁজ না নিয়ে সাসপেন্ড করা উচিত হয়নি।
তিনি বলেন, আসলে পিলভিটের শিক্ষা কর্মকর্তা ও ডিএম জলদিবাজিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। এই সাসপেনশন শীঘ্রই তুলে নেওয়া হবে। এ দিকে স্কুলের হেড মাস্টারকে এভাবে বরখাস্ত করার জন্য ছাত্ররা শুক্রবার থেকে ক্লাস বয়কট শুরু করেছে। ছাত্রদের দাবি— ইকবালের এই কবিতা আবৃত্তি করায় যদি সাসপেন্ড হতে হয়, তাহলে যারা এই কবিতা সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করেছে– তাদেরও সাসপেন্ড করতে হবে। সাসপেনশন নিয়ে সমালোচনা বাড়তে থাকায় শিক্ষামন্ত্রী ডাইরেক্টরটের কাছ থেকে বিস্তারিত রিপোর্টও চেয়েছেন। সেইসঙ্গে সমস্ত স্কুলকে নির্দেশ পাঠাতে বলেছেন, তারা কেবলমাত্র শিক্ষা বিভাগের মনোনীত কবিতা নিয়েই যেন দৈনিক প্রার্থনা করে।
পিলভিটের সেই স্কুলে প্রার্থনার সময় আল্লামা ইকবালের যে কবিতা আবৃত্তি করা হয়, সেই কবিতাটি ছিল ‘লব পে আতি হ্যয় দুআ’। ইকবালের সারে জঁহা সে অচ্ছা হিন্দুস্তা হমারা’ কবিতার মতো এই কবিতাটিও দেশাত্মবোধক। উত্তরপ্রদেশ শিক্ষা বোর্ড উর্দু ক্লাসের জন্য এই কবিতা সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করেছে। স্কুলের সিলেবাসের এই কবিতা নিয়ে আপত্তি উঠে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দলের পক্ষ থেকে।
ডিএম জানিয়েছিলেন, স্কুলে জাতীয় সংগীত বন্ধ করে ইকবালের কবিতা দিয়ে প্রার্থনা শুরু করা হলে সেটা অপরাধ। অন্য কবিতা ছাত্রদের দৈনিক প্রার্থনার জন্য ঠিক করতে হলে আগে থেকে অনুমতি নেয়া দরকার। কিন্তু স্কুলের শিক্ষক ও ছাত্রদের বক্তব্য, এখানে জাতীয় সংগীতের সঙ্গেই ইকবালের কবিতা পাঠ করানো হয়। আর এই নিয়ম বহু বছর ধরে চলে আসছে। শিক্ষক ফুরকান আলি বলেন, ভিএইচপি এবং হিন্দু যুবা বাহিনী স্কুলের বাইরে এবং কালেক্টর অফিসের সামনে প্রদর্শন করে। তারা আমার বহিষ্কার চায়। স্কুলের সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত একটি কবিতা পাঠ করেছে ছাত্ররা। এর মধ্যে অপরাধ কোথায়? আমাদের ছাত্ররা প্রতিদিন আবৃত্তির পর ‘ভারতমাতা কি জয়’ স্লোগানও দিয়ে থাকে। এখানে দৈনিক প্রার্থনায় ‘ও শক্তি হামে দো দয়ানিধি’ এই কবিতাটিও পাঠ করানো হয়।
উল্লেখ্য, এলাকার অমুসলিম অভিভাবকরাও ক্ষুব্ধ ফুরকান আলির বরখাস্ত নিয়ে। তাদের মন্তব্য, এই শিক্ষক নিজের বেতনের টাকা জমিয়ে ৬৫ হাজার রুপি দিয়ে স্কুলের জন্য প্রজেক্টর খরিদ করেছেন। ২০১১ সালে স্কুলে যোগ দিয়ে বেতনের টাকা খরচ করে এবং নিজের মেহনতে স্কুলকে বিশাল আকারে গড়ে তুলেছেন। এলাকার মানুষ সকলেই হেড মাস্টারকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করেন।
পিলভিটের বেসিক শিক্ষা কর্মকর্তা দেবেন্দ্র স্বরূপ জানিয়েছেন, আসলে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়েছে কি না এটা নিয়ে বিতর্ক নয়– আসল বিতর্ক হচ্ছে ইকবালের কবিতা পাঠ নিয়ে। এটা কবি ইকবালের বিরুদ্ধে আওয়াজ। কিন্তু যখন খোঁজ নিয়ে জানা যায় যে– ইকবালের কবিতাটি দেশাত্মবোধক– তখন ব্যাকফুটে চলে যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। হেড মাস্টারের সাসপেনশনের পর স্কুলে হাজিরা কমে যাচ্ছিল। শিক্ষামন্ত্রী এবার নেমে পড়েন মুশকিল আসানে। বরখাস্ত তুলে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
সূত্র : পূবের কলম