আ’লীগই দেশের মানুষকে কিছু দিতে পেরেছে : প্রধানমন্ত্রী
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। আওয়ামী লীগই এদেশের মানুষকে কিছু দিতে পেরেছে। এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
আজ শুক্রবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দু’দিনব্যাপী ২১তম ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শুক্রবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে দু’দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
আগামীকাল সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে কাউন্সিল অধিবেশনে নেতা নির্বাচনের মধ্যদিয়ে এই সম্মেলন শেষ হবে।
এর আগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ সময়ে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। পাশাপাশি সকল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি জাতীয় পতাকা এবং সাধারণ সম্পাদক দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। উদ্বোধনের পরপরই অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শোক প্রস্তাবের মধ্যদিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়।
শোক প্রস্তাব পাঠ করেন আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। পরে সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট পেশ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।
এবারের জাতীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগের স্লোগান হচ্ছে, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে গড়তে সোনার দেশ, এগিয়ে চলেছি দুর্বার, আমরাই তো বাংলাদেশ’।
উদ্বোধনী বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। আওয়ামী লীগই এদেশের মানুষকে কিছু দিতে পেরেছে। আওয়ামী লীগই একমাত্র দল যারা অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করছে। আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলবো, এটাই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, ২০০৯ থেকে ২০১৯ আজ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। এই এক দশকেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৫ ভাগে নামিয়ে এনেছি। জাতির পিতা যে স্বল্পোন্নত দেশ রেখে গিয়েছিলেন, আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। এটা ধরে রাখতে হবে। আমাদের লক্ষ্য সামনে আরও এগিয়ে যাওয়া।
এর আগে সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এবং সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত অভ্যর্থনা উপ-কমিটির আহবায়ক মোহাম্মদ নাসিম আগত অথিতিদের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে আগামীকাল প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কাউন্সিলর অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন আগামীকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হবে। কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন কার্যনির্বাহী সংসদ নির্বাচন করা হবে।
এসময় কমিটি নির্বাচনের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন নির্বাচন কমিশন। দলের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসূফ হোসেন হুমায়ুনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং উপদেষ্টা পরিষদের দুই সদস্য ড. মসিউর রহমান ও সাইদুর রহমানকে নির্বাচন কমিশনার করা হয়েছে।
সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশ থেকে আগত নেতাকর্মীদের আগমনে কানায় কানায় পরিপূর্ণ ছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। কাউন্সিলর, ডেলিগেট ও আমন্ত্রিত অতিথিদের পদচারণে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। শুধু তাই নয় সম্মেলন স্থলের বাইরেও নেতা-কর্মী এবং সমর্থকসহ সর্বস্তরের মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
আওয়ামী লীগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বিভিন্ন নিদর্শন নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হাজির হয়েছে আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)।
স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়া দল আওয়ামী লীগের দীর্ঘ পথ চলার বিভিন্ন ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে ১০টি স্থাপনা প্রদর্শন করছে তারা। যা সম্মেলনের জৌলুস আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের ২১তম সম্মেলন উপলক্ষে সকাল থেকেই সারাদেশের নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। মিছিলে মিছিলে মুখর হয়ে উঠতে থাকে উদ্যান প্রাঙ্গণ। বর্ণিল ব্যানার আর ফেস্টুনের সঙ্গে সঙ্গে সম্মেলনে যোগ দিতে আসা অনেকের হাতেই ছিল দলের প্রতীক, দলীয় নেতাকর্মীদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক নৌকা। বাহারি আকৃতি, নকশার সাথে সুসজ্জিত সব নৌকা তাদের হাতে।
সম্মেলন ঘিরে যেন মিছিল-স্লোগানে সাজ সাজ রব সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ৫০ হাজার নেতাকর্মীর এই বিশাল জমায়েত ঘিরে সতর্ক ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং এর আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের গেট দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে ছয়টি নৌকা। উদ্যানের গাছে গাছে লাগানো হয় মরিচবাতি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের এলাকায় ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড লাগানো হয়। মৎস্যভবন থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে লাগানো হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। পাশাপাশি লাগানো হয় আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের চিত্রসংবলিত ফেস্টুন।
মঞ্চ ও সাজসজ্জা :
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে ১০২ ফুট দীর্ঘ, ৪০ ফুট প্রসস্ত মঞ্চ তৈরি করা হয়। আশপাশের এলাকাসহ মূল মঞ্চটি এমনভাবে স্থাপন করা হয়, দেখে মনে হয়েছে, যেন পদ্মা নদীর বুকে ভেসে বেড়াচ্ছে বিশাল এক নৌকা। সেই নৌকার চারপাশজুড়ে থাকছে প্রদত্ত পদ্মার বিশাল জলরাশি। এর মধ্যে ছিল স্বপ্নের পদ্মা সেতু।
এছাড়া পদ্মার জলতরঙ্গ, পদ্মার বুকে ঘুরে বেড়ানো ছোট ছোট নৌকা, এমনকি চরের মধ্যে কাশবনের উপস্থিতিও ছিল। এর পেছনে ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার ছবি। নৌকার পেছনের দিকে জাতীয় চার নেতাসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামে বিভিন্ন সময়ে অবদান রাখা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ছবিও লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া সম্মেলনস্থলে সরকারের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের ফেস্টুন ও উন্নয়নের ছবি টানানো হয়।
সম্মেলনস্থলে নেতাকর্মীদের প্রবেশের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাঁচটি গেট ছিল। একটি গেট ভিআইপিদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়। ৮১ সদস্যের মধ্যে চারটি পদ শূন্য থাকায় মূল মঞ্চে চেয়ার ছিল ৭৭টি। মঞ্চের সামনে নেতাকর্মীদের জন্য চেয়ার রাখা হয় ৩০ হাজার। এছাড়া সম্প্রসারিত মঞ্চে ১৫ হাজার চেয়ার দেয়া হয়। ২৮টি এলইডি পর্দায় দেখানো হয় সম্মেলনের পুরো অনুষ্ঠান।
অভ্যর্থনা :
সম্মেলনে ইউএসএ, ইউকে, জাপান, ভারত, জার্মানী, দক্ষিণ কোরিয়া, উত্তর কোরিয়া, চায়না, ইইউ, ভিয়েতনাম, ইরাক, প্যালেস্টাইন, থাইল্যান্ডসহ বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবীসহ অন্যসব পেশার বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলন উপলক্ষে ১০০ চিকিৎসক নিয়ে ১২টি প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র প্রস্তুত করেছিল স্বাস্থ্য উপকমিটি। দুপুরে ৫০ হাজার নেতাকর্মীকে খাবার দেয়া হয়। আন্তর্জাতিক উপকমিটির পক্ষ থেকে সম্মেলন স্থানে কূটনীতিকদের জন্য বিশেষ স্টল স্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন রোজ গার্ডেনে জন্ম আওয়ামী লীগের। এখন ঐতিহ্যবাহী এই দলটির বয়স ৭০ বছর। এ পর্যন্ত দলটির ২০টি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এর আগে দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে শেখ হাসিনা সভাপতি ও ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
সূত্র : বাসস