‘আমি মুসলিম নই, কিন্তু তবু প্রতিবাদ করবো’

December 16 2019, 10:42

ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে সহিংস বিক্ষোভ চলাকালীন দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ। প্রাণ বাঁচাতে শিক্ষার্থীরা গ্রন্থাগার ও ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে পড়লেও পরে অনেককেই দেখা যায় রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন।

“আমরা ভেবেছিলাম পড়ুয়াদের জন্যে দিল্লি সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা এবং এটি একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। আমি ভেবেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ই সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা হবে, আমাদের কিছুই হবে না। আমরা সারা রাত ধরে কেঁদেছিলাম, কী হচ্ছে এই সব”, ঝাড়খণ্ডের রাঁচি থেকে আসা এক মহিলা শিক্ষার্থী কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন। তিনি এবং আরো অনেকেই আতঙ্কে হোস্টেল ছেড়ে যাচ্ছেন বলে জানান ওই শিক্ষার্থী।
“আমি এই গোটা দেশে নিরাপদ বোধ করছি না। কোথায় যাব এবং কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেবো তা আমি জানি না। আগামীকাল আমার বন্ধুরা ভারতীয় থাকবে কিনা তা জানি না”, বলেন ক্ষুব্ধ ছাত্রীটি।

নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দিল্লি, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় চলছে প্রতিবাদ বিক্ষোভ। ওই আইনের ফলে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ভারতে বসবাসরত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব লাভে সুবিধা হবে।

“আমি তো মুসলিম নই। তবুও আমি প্রথম দিন থেকে এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভের প্রথম সারিতে রয়েছি। কেন? আমার পরিবারের কী হয়েছে তা নিয়ে কেউ প্রশ্ন করতেই পারেন … কিন্তু আমি মনে করি আমরা যদি সত্য়ের পাশে দাঁড়াতেই না পারি তবে আমাদের পড়াশুনা কী কাজে লাগবে”, বলেন ওই ছাত্রীটি।

রোববার সন্ধ্যায় জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ মিছিল ক্রমেই সহিংস হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ভাঙচুর চালায় ও যানবাহন জ্বালিয়ে দেয়। সেই সময়েই পুলিশ এলে তাদের সঙ্গেও সংঘর্ষ বাধে শিক্ষার্থীদের। লাঠিচার্জ করে ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে প্রায় ১০০ জন শিক্ষার্থীকে আটক করে। যদিও পরে আটক করা সব শিক্ষার্থীকেই ভোর সাড়ে তিনটা নাগাদ ছেড়ে দেয়া হয়।

ওই শিক্ষার্থী বলেন,”এই ঝামেলা শুরু হওয়ার সময় আমরা লাইব্রেরিতে ছিলাম; সুপারভাইজারের কাছ থেকে আমরা ফোন পাই যে পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। আমি সবে বেরোতে যাব, তখনই একটি ভিড় গ্রন্থাগারের দিকে ছুটে আসে এবং ৩০ মিনিটের মধ্যে গ্রন্থাগার চত্বর ভরে যায়”।

“আমি কিছু ছেলেকে রক্তাক্ত অবস্থায়​দেখতে পাই। সেই সময়েই পুলিশ ভিতরে এসে গালিগালাজ করতে শুরু করে। ওরা সবাইকে সরে যেতে বলছিল”, বলেন তিনি।

“আমরা হাত উপরে তুলে ধরে যাচ্ছিলাম। অবশেষে আমি আমার হোস্টেলে পৌঁছই। তখনই কিছু ছেলে ছুটে এসে আমাদের হোস্টেলে খবর দেয় যে কিছু মহিলা পুলিশ আমাদের মারধর করতে আসছে। আমি তখন পাশের ঝোপের দিকে ছুটে যাই ও সেখানে লুকিয়ে পড়ি। তারপরে আমি আমার হস্টেলে ফিরে আসি। আমি আরো অনেক ছেলেকে দেখি যাদের পোশাক রক্তাক্ত ​​ছিল”, জানান ওই ছাত্রী।

“কোনো আগাম অনুমতি না নিয়েই পুলিশ জোর করে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। আমাদের কর্মী ও শিক্ষার্থীদের মারধর করা হয় এবং ক্যাম্পাস ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়”, বলেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের চিফ প্রক্টর ওয়াসিম আহমেদ খান।

এদিকে উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা চিন্ময় বিসওয়াল এনডিটিভিকে জানান, উন্মত্ত জনতা পাথর ছুঁড়তে শুরু করলেই পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে। তিনি বলেন, “আমরা কোথা থেকে এই হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড চলছে তা খতিয়ে দেখতেই সেখানে প্রবেশ করি।”
সূত্র : এনডিটিভি