আবরার হত্যাকাণ্ড এবং রাজনৈতিক চাতুর্য

October 19 2019, 19:41

আবরার হত্যাকাণ্ড সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ও বিতর্কিত বিষয়। বাংলাদেশের হৃদয় থেকে আজো যে মানবিকতা বিসর্জিত হয়নি আবরার হতাকাণ্ডের পরবর্তী ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। সামগ্রিকভাবে সাধারণ জনগণ বিচলিত, বিক্ষুব্ধ এবং উদ্বিগ্ন। মতাদর্শ নির্বিশেষে দেশের বুদ্ধিজীবীরা সমাজ দারুণভাবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি একক মৃত্যু আর কখনো সমাজকে এত কঠিনভাবে আলোড়িত করেনি। এর কারণ সম্ভবত এই যে, অত্যাচার-অনাচারে অবশেষে সবার পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে। বিপ্লবী চে গুয়েভারা বলতেন, ‘মুক্তি অথবা মৃত্যু’। সম্ভবত বাংলাদেশ সে অবস্থানেই পৌঁছেছে। এ ক্ষেত্রে বিরোধী দলের ভূমিকা হতাশ হওয়ার মতো। মানুষ যে প্রচণ্ডতা নিয়ে প্রত্যাঘাত করতে প্রস্তুত, তাদের ভূমিকা সে রকম সার্থক হয়নি। সে ক্ষেত্রে সরকারি দলের ভূমিকা দৃশ্যত জনস্রোতের সাথে সামঞ্জস্যশীল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ভাষা ও বাক্যে ঘটনায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তা আইনানুগ ও প্রত্যাশিত। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক’ নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন ঘটনা যত শীতল হতে যাচ্ছে সরকারি দলের উষ্ণতা তত বাড়ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে তারা বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের ব্যাপারে অনুকূল মত প্রকাশ করলেও ধীরলয়ে এখন তার বিরোধিতা ক্রমেই তীব্রতর হচ্ছে। তাদের কথা ও কাজে রাজনৈতিক চাতুর্য ক্রমেই স্পষ্টতর হচ্ছে।

সে দিন এক টকশোতে গিয়েছিলাম। আলোচ্য বিষয় ছিল, ‘বুয়েট পরিস্থিতি’। টকশোতে ভিন্নমতের প্রাধান্য লোপ পেতে পেতে বিগত নির্বাচনের সময় জিরো পয়েন্টে পৌঁছেছিল। চ্যানেল খুললেই সরকারি দলের ‘প্রশংসা ও প্রশস্তি’ শোনা যেত। আবরার হত্যাকাণ্ডের পর জনমত লক্ষ করে এখন দু-একজন ভিন্নমতের লোককে হাজির করা হচ্ছে। সে দিন টকশোতে উপস্থিত ছিল চারজন। একজন সিনিয়র মন্ত্রী, একজন সরকারি দলের ভাষ্যকার এবং আওয়ামী নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি। আর আমি ভিন্নমতের প্রতিনিধিত্বশীল একজন। সেখানে যথার্থভাবেই সরকারের প্রতিনিধিত্বশীল বক্তব্যের প্রকাশ ঘটেছে। আবরারের জন্য অশ্রুপাতে তারা কোনো ত্রুটি করেনি। কিন্তু যখন সমস্যার গহিনে প্রবেশ ঘটেছে এবং সমাধানের পথ প্রদর্শিত হয়েছে তখন তারা দারুণ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

ছাত্র রাজনীতি বন্ধে বা নিষিদ্ধকরণে তাদের প্রবল আপত্তি। তাদের যুক্তি এই যে, বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। এ ব্যাপারে নিশ্চয় কেউ দ্বিমত করবে না। কিন্তু ছাত্র রাজনীতিতে বর্তমানে যে দুর্বৃত্তায়ন ঘটেছে, তার লোক দেখানো স্বীকৃতি তারা দিচ্ছে বটে, কিন্তু তার সমাধানে সায় নেই শাসক দলের। তার কারণ তারা ছাত্রলীগকে ক্ষমতায় আরোহণ এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। সন্দেহ নেই পাকিস্তান আমলে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার ভিত্তি ছিল জনগণ। ১৯৭০ সালে ধারণাতীত সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ। ১৯৭১ সালে সুদৃঢ় জনভিত্তির কারণে আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় লাভ করি। কিন্তু স্বাধীনতার পরপর আওয়ামী লীগের সেই আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা নামতে নামতে পাতালে প্রবেশ করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ব্যাকরণে এটাই ঘটা স্বাভাবিক। যেকোনো দেশের মুক্তিযুদ্ধে সব দলমতের লোক অংশ নেয়। স্বাধীনতা অর্জনের পর সেই ঐক্যের আবেদন স্বাভাবিকভাইে হারিয়ে যায়। তবে যেসব রাজনৈতিক দল জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার সাথে তাল মিলিয়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে অগ্রসর হয় তারা ক্ষমতাকে বহুদূর নিয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে একটি বড় উদাহরণ হচ্ছে ভারতের কংগ্রেস। এখানে নেতৃত্ব একটি বড় ভূমিকা পালন করে। সে যাই হোক, প্রাথমিক সময় থেকে বর্তমান পর্যায় দেখা যায় যে, ছাত্রলীগ ক্ষমতাসীন দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ১৯৭২-৭৫ সময়কালীন ছাত্রলীগের রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের পরিচয় পাওয়া যায়। সে সময়ও সন্ত্রাস, সম্পত্তি দখল, লুটপাট এবং হত্যাকাণ্ডে ছাত্রলীগের সুনাম ছিল! ১৯৭৪ সালে মুহসিন হলে ‘সেভেন মার্ডার’-এর প্রামাণ্য উদাহরণ। ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর যখন তারা ক্ষমতা পুনর্দখল করে তখন ছাত্রলীগের একই চেহারা প্রকাশ পায়। ২০০৮ সাল থেকে বিগত প্রায় ১২ বছরে ক্ষমতার ক্ষমতার ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে ছাত্রলীগ।

জনসমর্থনশূন্য আওয়ামী লীগের নির্বাচনে ছাত্রলীগ-যুবলীগকে নিকৃষ্টভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এখন তারা যদি তাদের থেকে উৎকৃষ্ট আচরণ আশা করে তা হবে একটি আত্মপ্রতারণা। ছাত্রলীগ-যুবলীগের যে চেহারা তারা নিজেরাই উন্মোচন করেছে তার জন্য দায়ী কে? কখনো কখনো তারা ওইসব লোকের বিরোধীদলীয় চরিত্র আবিষ্কার করে তারা দোষ স্খলনের চেষ্টা করে। ওবায়দুল কাদেরের কথিত এই ‘কাউয়াদের’ অনুপ্রবেশ করার সুযোগ কারা দিয়েছিল? অপরাধ জগতের যদি হিসাব নেয়া হয় তাহলে তা গরিষ্ঠ অংশই আসে ক্ষমতাসীনদের এসব সহযোগীদের থেকে। খুন, জখম, গুম এবং চুরি-ডাকাতির অসংখ্য অভিযোগে ধৃত এসব কর্মীর কোথাও কোনো বিচার হয়েছে কি? যা হয়েছে তা আইওয়াশ বা লোক দেখানো। বিশ^জিৎ হত্যার বিষয়টি যদি একটি টেস্ট কেস হিসেবে দেখা হয়, তাহলে আমরা দেখব বিচারে অপরাধীদের দৃশ্যত কঠিন শাস্তি হচ্ছে। কিন্তু তারা ধরা পড়েনি। অথবা যারা ধরা পড়ে ফাঁসি বা আজীবন কারাদণ্ডের শিকার হয়েছে পরবর্তীকালে তারা রাষ্ট্রপতির বিশেষ অনুকম্পা লাভ করে মুক্ত হয়েছে। শুধু বিশ^জিৎ নয় এরকম অসংখ্য ঘটনা গত ১২ বছরে সোনার ছেলেরা ঘটিয়েছে। তার কোনো বিচার হয়নি। বিচারহীনতার এ সংস্কৃতি তাদের করে তুলেছে বেপরোয়া এবং দুর্বিনীত।
বুয়েটের আবরার হত্যা এরকম অসংখ্য ঘটনার একটি মাত্র। তারা নিপীড়ন-নির্যাতন, অন্যায়-অত্যাচার ও গুম-হত্যাকে ক্ষমতার অনিবার্য কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেছে। সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে তারা এসব করিয়েছে। সবাই জানে যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগী হিসেবে সবসময় ছাত্রলীগকে ব্যবহার করা হয়েছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের প্রত্যক্ষ প্রমাণ রয়েছে। যারা এসব অন্যায়ের অত্যাচারের হাতিয়ার হিসেবে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করেছে তারা এখন ভালো কথা বলেন কোন মুখে? চোরের মায়ের বড় গলা কার্যত অবশেষে ধোপে টেকে না। মূলত আওয়ামী লীগ তাদের রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে নিপীড়নকেই বেছে নিয়েছে। এটিই তাদের রাজনৈতিক দর্শন। তাদের একটা বুলি আছে- স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি। এই অভিযোগ প্রয়োগ করে তারা বিগত বছরগুলোতে রাজনৈতিক বৈরীকে নির্মূল করেছে। এখন তারা সুর তুলেছে যে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করলে স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি ক্ষমতায় আসবে। প্রকাশ্যেই বলছেন ইসলামী ছাত্রশিবির সব দখল নিয়ে নেবে। এ কথা দিয়ে, তারা কি বুঝাতে চাচ্ছে যে, তাদের কথিত স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তি কি এতই দুর্বল যে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি তাদের ওপর জয়লাভ করবে? আরো প্রশ্ন থেকে যায় যে, মানুষের দেশপ্রেমের ওপর তাদের কি আস্থা নেই যে, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি দেশপ্রেমের কাছে পরাজিত হবে? এতদিন ধরে যে শিক্ষা দীক্ষা তারা দিলেন তা কি এতই ঠুনকো যে বিরোধীরা সহজেই জয়লাভ করবে? বস্তুত এটি হচ্ছে একটি রাজনৈতিক প্রতারণা। জুজুর ভয় দেখিয়ে তারা ভিন্ন মতাবলম্বীদের নির্র্মূল করতে চায়। বিরোধী শক্তিকে কৌশলে চিরকালের জন্য ধ্বংস করে দিতে চায়। এখন জোরেশোরে আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রীরা একই কথা বলে চলেছেন। তাহলে আবরার হত্যাকারীদের বক্তব্য থেকে তাদের ভিন্নতা কোথায়?

আবরার হত্যাকারীরা বলেছে এবং আদালতে প্রদত্ত বক্তব্যেও স্বীকার করেছে যে, তারা সন্দেহ করছিল যে আবরার শিবির করে। তাই যদি না হবে তবে ভারত-বাংলাদেশ সাম্প্রতিক চুক্তির বিরোধিতা কেন সে করবে? মনে হয় যেন দেশপ্রেম শিবিরের একক সম্পত্তি! অন্য কেউ ভিন্নমত পোষণ করতে পারে না। অথচ দেশে ডান ও বাম ধারার অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তি ও দল রয়েছে যারা সাম্প্রতিক চুক্তিসহ অসংখ্যবার ভারতের কাছে বাংলাদেশের নতি স্বীকারের রাজনীতির বিরোধিতা করেছে। শিবির গুজবের আরো উদাহরণ রয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা যখন যৌন নিপীড়নবিরোধী আন্দোলনের সূচনা করে তখন ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা একে শিবিরের কারসাজি বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে। কোটাবিরোধী আন্দোলনের যখন সূচনা হয় তখন ওই সোনার ছেলেরা একই কথা বলেছে।

কোটাবিরোধী আন্দোলনের একপর্যায়ে এক সময়ের ‘অগ্নিকন্যা’ আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা বলে গালি দিয়েছিলেন। এভাবে উদর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে তুলে দিয়ে তারা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চেয়েছিল। আবরার যে শিবিরকর্মী ছিল না তা সে জীবন দিয়ে প্রমাণ দিয়ে গেছে। তার পরিবার যে আওয়ামীসংশ্লিষ্ট তার সে পরিচয় মিলেছে। আওয়ামী লীগও তাদের আওয়ামী প্রমাণ করার প্রয়াস পাচ্ছে। তাহলে আওয়ামী লীগের মৌলিক অবস্থানটি কোথায় গিয়ে দাঁড়াল? এটা কি প্রমাণিত হলো না যে, ভিন্নমত পোষণকারীদের প্রতি আওয়ামী লীগ তটস্থ? এখানে আরো একটি বিষয় প্রমাণিত যে, ভারত বিরোধিতা সহ্য না করাও আওয়ামী লীগের বিঘোষিত নীতি। একজন দেশপ্রেমিক মানুষ ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভারত-বাংলাদেশ চুক্তিতে বিশ্লেষণ করতেই পারে! আবরারের ভারত বিরোধিতার কারণে তাকে প্রাণ দিতে হলো। আর তার প্রাণ কেড়ে নিল ছাত্রলীগ। তারা তাদের ভারত বাংলাদেশ মৈত্রীর ভ্যানগার্ড প্রমাণ করতে চায়। এই সেদিন প্রধানমন্ত্রী ভারতের কাছে এলপি গ্যাস বিক্রি এবং ফেনী নদী থেকে খাবার পানি দেয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন।

যারা এ চুক্তির বিরোধিতা করছে তিনি তাদের তুলোধোনা করেছেন। এখন আওয়ামী লীগের নেতা, পাতি নেতারা ওই চুক্তির বিরোধিতাকারীদের গালমন্দ করছেন। তাহলে বুয়েট ছাত্রলীগের বক্তব্য থেকে তাদের পার্থক্য কোথায়? এরকম একটি উপসংহার নেয়া কি অযৌক্তিক হবে যে, তারা নেতানেত্রীর বক্তব্যের সমর্থনেই আবরারকে পিটুনি দিয়েছে। দুর্ভাগ্যক্রমে সে মৃত্যুবরণ করেছে। বুয়েট কর্তৃপক্ষ তাদের প্রকাশ্য ভাষ্যে এই নির্মম মৃত্যুকে হত্যা হিসেবে চিহ্নিত না করে ‘অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু’ বলে চিহ্নিত করেছে। বুয়েটের ভিসি প্রোভোস্ট তাকে খবর দেয়ার পরও ঘটনাস্থলে আসেননি। তার জানাজায় শরিক হননি। এটা কি প্রশাসনের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় নয়? প্রশাসন তথা ভিসি হয়তো ভেবেছিলেন ছাত্রলীগের অপকর্মের বিরোধিতা করলে হয়তোবা প্রভু নাখোশ হতে পারে। এখন যখন ঠ্যালায় পড়েছেন, গদি নড়বড়ে হয়েছে তখন তিনি রীতিমতো ‘বিগলিত ব্যানার্জি’ হয়ে গেলেন! যিনি জানাজায় যেতে পারেননি তিনি এখন আবরারের বাড়িতে গিয়ে বিব্রতকর অবস্থাও হজম করছেন!

আবরারের হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করেছে ছাত্র রাজনীতি কতটা নিষ্ঠুর-নির্মম ও পাশবিক হয়ে পড়েছে। গোটা জাতি যখন ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের মাধ্যমে এ অবস্থার পরিবর্তন চাইছে তখন শাসক দলের মধ্যে মসনদ হারানোর আশঙ্কা তীব্রতর হয়ে উঠেছে। মুখে মুখে ছাত্রলীগের লোক দেখানো নিন্দা করে মানুষকে খুশি করতে চাইছে। জনসমর্থনহীন নিশীথ রাতের নির্বাচনী সরকার ছাত্রলীগের শক্তির মদমত্ততায় নির্ভর করে তাদের শাসন-ত্রাসন দীর্ঘায়িত করতে চাইছে।

তাদের এই দ্বিমুখী রাজনীতি কৌটিল্য বা ম্যাকিয়াভেলির রাজনৈতিক চাতুর্যের সাথে তুলনীয়। দার্শনিকদ্বয় বলছেন, ক্ষমতার স্বার্থে মিথ্যাচার, প্রতারণা ও প্রবঞ্চনা ন্যায়সঙ্গত। এরকম উদাহরণ দিয়েছেন যে, বিদ্রোহী জনসাধারণকে দমনের জন্য সেনাপতি নির্মমতা ও নৃশংসতা প্রদর্শনে পিছ পা হবেন না। আবার প্রজা সাধারণকে খুশি করার জন্য রাজা যদি ওই সেনাপতিকে ফাঁসি দেন, তা হবে রাজনৈতিক কৌশলসম্মত। তবে এ ধরনের রাজনৈতিক চাতুর্য ন্যায়-সত্য, সময় ও জনস্রোতের কাছে পরাজিত হতে বাধ্য।

লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com