আজ ঢাকায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল বিএনপির

February 02 2020, 05:01

ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে কারচুপি ও ভোট জালিয়াতির প্রতিবাদে আজ রোববার ঢাকায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
গতরাতে রাত ৮টায় এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, ‘ঢাকা সিটি করপোরেশনের উত্তর ও দক্ষিণে নির্বাচনের ফলাফলকে আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। দুই সিটির নির্বাচনে ভয়াবহ রকমের কারচুপি, জালিয়াতি, জবরদস্তি করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কারণে এবং জনগণের রায়কে একেবারে পদদলিত করে দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এই নির্বাচনকে প্রভাবিত ও লুট করে ফলাফল নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছি। এর প্রতিবাদে আমরা রোববার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সকাল-সন্ধ্যা ঢাকা শহরে হরতাল আহ্বান করছি। আমরা আশা করব, ঢাকাবাসী তাদের অধিকার রক্ষার জন্য শান্তিপূর্ণভাবে এই হরতাল পালন করবে এবং গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সহযোগিতা করবেন।

বিএনপি মহাসচিব জানান, হরতালের আওতায় অ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী গাড়ি, ওষুধের দোকান, খাবার দোকান প্রভৃতি আওতামুক্ত থাকবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের উত্তর ও দক্ষিণ দুটোরই ফলাফল সরকারি ঘোষণা প্রায় স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আমরা যে আশঙ্কা করেছিলাম সেই আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। এই নির্বাচনও সরকার আগের নির্বাচনের মতোই তারা রাষ্ট্রীয় যন্ত্রকে ব্যবহার করে, নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে তারা তাদের মতো করে দখল করে নিয়েছে। এই সরকার অত্যন্ত সচেতনভাবে গণতন্ত্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে এবং তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে একটি একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। সেটাই তারা এখন করতে যাচ্ছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন যেভাবে গঠন করা হয়েছে তাদের ক্রীড়ানক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগের অধীনে কখনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না।
নির্বাচন কমিশন সরকার ‘বশংবদ’ কমিশন হিসেবে কাজ করছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচনের নামে তামাশা হয়েছে : ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের নামে তামাশা হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ইভিএমে ভোটগ্রহণে আমরা যেটা আশঙ্কা করেছি সেটাই হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিজে ৭ বার ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেলাতে না পারার কথাও বলেন তিনি। গতকাল শনিবার বিকেলে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হওয়ার পরই এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ঢাকার দুই সিটিতে নির্বাচনের নামে আরেক তামাশা অনুষ্ঠিত হয়েছে যা আপনারা সবাই দেখেছেন। আমরা মনে করি যে, এটা এতটুকুও অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। ফলাফল ঘোষণার পর বিএনপির আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে জানিয়ে মহাসচিব বলেন, আমরা এই নির্বাচনকে পর্যবেক্ষণ করেছি। ভোটের সকালটা শুরু হয়েছে একটা বড় রকমের বিধি লঙ্ঘনের মধ্য দিয়ে। সেটি হচ্ছে যে, প্রধানমন্ত্রী সিটি কলেজে ভোট দিতে গিয়ে যে বক্তব্য রেখেছেন তা সরাসরিভাবে নির্বাচনে হস্তক্ষেপের শামিল হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোট প্রদান করে সকালে গণমাধ্যমে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। যা নির্বাচনী আচরণবিধির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তার এই আহ্বান দলীয় সন্ত্রাসীদের ভোটকেন্দ্র দখল, বিএনপি দলীয় এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া এবং নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণভাবে নিরুৎসাহিত করেছে।

নির্বাচন কমিশনের জারিকৃত ২৯ জানুয়ারির পরিপত্রের ভাষ্য তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ওই পরিপত্রে বলা হয়েছে কোনো ভোটারের আঙ্গুলের ছাপ ইভিএম গ্রহণ না করে বা ম্যাচিং না হয় সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ভোট কক্ষের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার নিজের আঙ্গুলে ছাপ ব্যবহার করে ওই ভোট কক্ষের মোট ভোটের সর্বোচ্চ ১% ভোটারকে শনাক্ত করে নিজে দায়ভার নিয়ে ভোট প্রদানের ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন। প্রতিটি ভোট কক্ষের এই ১% ভোটারের অতিরিক্ত বায়োমেট্রিক নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সরবরাহকৃত একটি পিন নাম্বার ছাড়া সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার নিজের বায়োমেট্রিক দিয়ে আর খুলতে পারবেন না। কিন্তু নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রের ভোট কক্ষগুলোর সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের এই ১%-এর অতিরিক্ত ভোটারের বায়োমেট্রিক শনাক্তকরণ সংক্রান্ত পিন নাম্বার দুপুরের পরে ভোটকেন্দ্রগুলোয় দিয়ে দিয়েছেন। ফলে এখন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের আঙ্গুলের ছাপে ভোটার উপস্থিতি না হলেও সরকারের চাহিদা মোতাবেক ওই কেন্দ্রের মোট ভোটের যত সংখ্যক প্রয়োজন তত সংখ্যক ভোটের ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন। নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট জালিয়াতির পথ ক্ষমতাসীন দলের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, বিএনপির এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেয়া হয়েছে। যারা এই বাধা অতিক্রম করে ভোটকেন্দ্রে গিয়েছে তাদেরকেও সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা ভয়ভীতি, হুমকি-ধমকি, মারধর ও বের করে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রিজাইডিং অফিসার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার গণমাধ্যমে বলেছেন এজেন্টদের টিকে থাকার সামর্থ্য থাকতে হবে, এজেন্টদের তিনি প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরামর্শ দেন। এই কথা বলে তিনি সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের উসকে দিয়ে সঙ্ঘাতের দিকে যাওয়ার ইন্ধন দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার নিজেই বলেছেন, এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি সেন্টারে। যেসব এজেন্ট বাধা উপেক্ষা করে ভোটকেন্দ্রে গেছেন তাদেরকে দুপুর ১২টার মধ্যেই শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে বের করে দেয়া হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রের সামনে দুই থেকে আড়াই শ’ বহিরাগত জড়ো করে রাখা হয়। সমগ্র ঢাকা শহরে পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সৃষ্টি করে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করা হয়েছে। ফলে ভোটাররা নিরাপত্তাহীনতার কারণে ভোটকেন্দ্রে যায়নি। ভ্রাম্যমাণ আদালতগুলোকে নির্বাচনী মাঠে দেখা যায়নি।

মির্জা ফখরুল বলেন, অনেক কেন্দ্রে ইভিএমে ধানের শীষের প্রতীক ছিল না। ফলে ভোটাররা ভোট প্রদান করতে পারেননি। অনেক কেন্দ্রে ভোটারদের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে শনাক্তকরণের পর ভোট না দিতে দিয়েই কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে। অনেক কেন্দ্রে ভোটারের সাথে ভোট কক্ষে ঢুকে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে। অনেক স্থানে সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেয়া হয়েছে, অনিয়মের ছবি তুলতে বাধা দেয়া হয়েছে, সাংবাদিকদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটির ধানের শীষের মেয়রপ্রার্থী ও তাদের প্রধান নির্বাচনী এজেন্টরা শত শত অভিযোগ রিটার্নিং অফিসার ও নির্বাচন কমিশনে প্রেরণ করলেও তা প্রতিকারে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে জানান বিএনপি মহাসচিব। সংবাদ সম্মেলনে কয়েক শ’ অভিযোগের তালিকা সাংবাদিকদের সরবরাহ করা হয়।