আজহার বললেন, ‘অভিযোগের সাথে দূরতম সম্পর্কও নেই’
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আপিল বিভাগ ফাঁসির রায় বহাল রাখার পরদিন গতকাল শুক্রবার জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামের সাথে তার আইনজীবীরা কারাগারে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি তাদের বলেন, তিনি কোনো অন্যায় করেননি। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তার সাথে তার দূরতম কোনো সম্পর্কও নেই।
কাশিমপুর কারাগারে এ টি এম আজহারের সাথে গতকাল তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি টিম সাক্ষাৎ করে। জামায়াতের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ এবং মানসিকভাবে অনেক দৃঢ় আছেন। লিখিত রায় পাওয়ার পর আইন মোতাবেক তিনি আইনজীবীদের রিভিউ আবেদন দায়েরের নির্দেশ দিয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজহার আইনজীবীদের বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তার সাথে আমার দূরতম কোনো সম্পর্কও নেই। আমি কোনো অন্যায় করিনি। ১৯৭১ সালে আমার বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর। এ বয়সের তরুণ ১৪০০ মানুষকে হত্যা করেছে তা পাগলেও বিশ^াস করবে না। অথচ এ ধরনের একটি মিথ্যা কাহিনী আমার বিরুদ্ধে রচনা করে আমাকে যে সাজা দেয়া হয়েছে তা আমার ওপর চরম জুলুম ছাড়া আর কিছুই নয়। আদালতের চারজন বিচারপতির মধ্যে একজন বিচারপতি এ রায় সম্পর্কে দ্বিমত পোষণ করেছেন। এতেই প্রমাণিত হয় এটি একটি প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত রায়। এ দেশের জনগণের বিবেকের কাছে আমার প্রশ্ন ৭ কিলোমিটার এবং ৩ কিলোমিটার দূর থেকে দেখা ঘটনার সাক্ষীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ফাঁসির এ রায় দেয়া কী আমাকে হত্যার নামান্তর নয়? তিনি ভীত না বিচলিত নন জানিয়ে আইনজীবীদের জানান, যদি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয় সেটি হবে শহীদি মৃত্যু। দেশবাসীকে সালাম জানিয়েছেন ও তার জন্য দোয়া করতে বলেছেন।
গ্রেফতারের নিন্দা : খুলনা, ঢাকা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও বরিশালে জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করার ঘটনার নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি হামিদুর আযাদ গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, ৩১ অক্টোবর খুলনা মহানগরী শাখা জামায়াতের নায়েবে আমির মাস্টার শফিকুল আলমসহ দুজন নেতাকর্মীকে, গতকাল ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য আবদুস সবুর ফকির ও ফরিদ হোসাইন, কদমতলী থানা শাখা আমির মাওলানা আমিরুল ইসলাম বাহারসহ পাঁচজন নেতাকর্মীকে, ৩১ অক্টোবর চাঁপাইনবাবগঞ্জে জামায়াত-শিবিরের ১১ জন নেতাকর্মীকে এবং বরিশাল মহানগরীতে ছাত্রশিবিরের দুজন নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সরকার জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের ওপর পর্বত প্রমাণ জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে। গণতান্ত্রিকভাবে শান্তিপূর্ণ কোনো প্রতিবাদ সরকার সহ্য করতে পারছে না।
তিনি বলেন, সরকার ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের ধারাবাহিকভাবে হত্যা করছে। কোনো রকমের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ পর্যন্ত করতে দিচ্ছে না। দমন-নিপীড়ন চালিয়ে গোটা দেশে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। দেশে আইনের শাসন ও গণতন্ত্র বলতে কোনো কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। এ অবস্থায় কোনো দেশ চলতে পারে না। ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারের জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। এ সময় গ্রেফতারকৃত সব নেতাকর্মীকে মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।