অতিরিক্ত ব্যাংকঋণে উদ্বিগ্ন সরকার

February 04 2020, 04:27

ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে সরকারের ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ। এই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। কারণ সরকারের ব্যাংকঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণে এর সুদব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। একই সাথে বেসরকারি খাতও ব্যাংকঋণ থেকে বঞ্চিত হতে পারে।

মূলত সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়া ও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় না হওয়ায় অনেকটা বাধ্য হয়ে ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারকে ব্যাংকঋণের ওপর বর্ধিত হারে নির্ভর করতে হচ্ছে। তবে আশা করা হচ্ছে, বছরের শেষ দিকে রাজস্ব আদায় বাড়লে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণও কমে আসবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিমাণ ছিল ৫০ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা।

এর মধ্যে শুধু ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্তই সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে দুই হাজার ৮২৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯৩৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা বেশি। গত বছর ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিল ৪৬ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা।

এই পরিস্থিতিতে পুরো অর্থবছরের সরকারের ব্যাংকঋণ নেয়ার পরিমাণ ৬৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকারের ব্যাংকঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। কিন্তু ছয় মাস ১৫ দিনেই সরকার বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত ঋণ নিয়ে ফেলেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ৫০ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যা গত অর্থবছরে একই সময়ে তুলনায় চার হাজার ৩৩৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বেশি। গত বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ ঋণের স্থিতি ছিল ১২ লাখ ৪ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত যা ছিল ১০ লাখ ৮০ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা।

এবার এই ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। সরকারের ব্যাংকঋণ নেয়ার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় অভ্যন্তরীণ ঋণের স্থিতিও বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বছরের জুনের তুলনায় গত বছরের ডিসেম্বরে অভ্যন্তরীণ ঋণের স্থিতি বেড়েছে ৩৭ দশমিক ১৯ শতাংশ। এর আগের বছরে একই সময়ে যা ছিল ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, রাজস্ব আদায় বাড়ানোর বিষয়টি আলোচনা করার জন্য ইতোমধ্যে এনবিআর কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা হয়েছে। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে বছরে বাকি সময়ে রাজস্ব আদায় অনেক বেড়ে যাবে। কারণ বছরের শুরুতে এমনিতে রাজস্ব আদায় কম থাকে। কিন্তু বাকি সময়ে আদায় বেড়ে যায়। আগামীতে ভ্যাট আদায়ের পরিমাণ বাড়বে।

কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, ইতোমধ্যে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ‘ইএফডি’ মেশিন স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। আশা করা যায়, এই মেশিনের ফলে ভ্যাট আদায়ের পরিমাণ বাড়বে।

এ দিকে অর্থবছরের ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ঘাটতি বেড়ে হয়েছে ৩১ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। এই সময়ে রাজস্ব আদায়ে মূল তিনটি খাতের একটিও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয়নি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া যায়।

চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এনবিআরের মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ ২৫ লাখ ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু ছয় মাসে রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয়েছে এক লাখ ৫১ হাজার ৬১ হাজার টাকা। কিন্তু আলোচ্য সময়ে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আদায় করার টার্গেট ছিল এক লাখ ৩৬ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা।

সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে আমদানি ও রফতানি পর্যায়ে রাজস্ব আদায়। ছয় মাসে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় মাত্র এক দশমিক ৯৬ শতাংশ। ছয় মাসে এ খাত থেকে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্য ছিল ৪৪ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। কিন্তু এর বিপরীতে আদায় করা সম্ভব হয়েছে ৩১ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব ঘাটতি ১৩ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হার ৭০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ খাত থেকে ১২ মাসে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট রয়েছে ৯২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা।

একইভাবে ছয় মাসে স্থানীয় পর্যায়ে মূসক (ভ্যাট) আদায় করার কথা ছিল ৫১ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা। কিন্তু ছয় মাসে প্রকৃত আদায় হয়েছে ৪১ হাজার ৯০ লাখ টাকা। ঘাটতি ১০ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা।

আয়কর ও ভ্রমণকর খাতে ছয় মাসে আদায় টার্গেট রয়েছে ৪০ হাজার ৭৫ লাখ টাকা। কিন্তু একই সময়ে আদায় হয়েছে ৩২ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা। আদায় ঘাটতি হয়েছে ৭ হাজার ৪২৮ কেটি টাকা।