বিয়ের আগেই ছেলে সন্তানের মা হলেন নবম শ্রেণীর ছাত্রী

October 21 2019, 15:11

বরগুনার পাথরঘাটায় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মাসের পর মাস স্কুল ছাত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন একই এলাকার আরেক কলেজ পড়য়া রাজু আহমেদ (২০)। এক পর্যায়ে স্কুল ছাত্রী (১৪) অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এরই মধ্যে দু’জনের সম্পর্কে ভাঙন সৃষ্টি হয়। অভিযুক্ত ধর্ষক রাজু আহমেদ চলে যায় নিজ ক্যাম্পাস বরিশাল অমৃত লাল দে কলেজে।

কয়েক মাস পার হয়ে যাওয়ার পর ওই স্কুল শিক্ষার্থীর শারীরিক পরিবর্তন হলে পরিবারের চাপে এক পর্যায়ে তার অন্তঃসত্ত্বার খবর বড় বোনের কাছে স্বীকার করেন। ধর্ষণের শিকার অন্তঃসত্ত্বা স্কুলছাত্রী রোববার রাত আটটার দিকে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি পুত্র সন্তান জন্ম দেয়।

জানা গেছে রাজু আহমেদ বরিশাল অমৃত লাল দে কলেজে অনার্স শ্রেণীতে ভর্তির চেষ্টা করছে। উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুল জলিলের ছেলে।

এর আগে পাথরঘাটা উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাতিমা পারভীনকে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি ভুক্তভোগী ছাত্রীকে নিয়ে পাথরঘাটা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে পাথরঘাটা থানা পুলিশ অভিযুক্ত রাজুর বাবা আব্দুল জলিলকে আটক করে কারাগারে প্রেরণ করলেও রাজুকে আটক করতে পারেনি।

ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীর সন্তান প্রসবের খবর পেয়ে পাথরঘাটা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিএম আশরাফ উল্ল্যাহ তাহের ও পাথরঘাটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন নবজাতকের জন্য নতুন পোশাক নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে মা ও সন্তানের খোঁজ খবর নেন। এছাড়াও বরগুনা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন নগদ ৫ হাজার টাকা আর্থিক সহয়তা প্রদান করেন। এ সময়ে তারা শিশুটির নাম ‘জয়’ রাখেন।

ওই ছাত্রী জানান, স্কুলে আসা যাওয়ার পথে রাজু আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিতো। এক পর্যায়ে আমাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে রাজু। আমার এই সন্তানের পিতা রাজু আহমেদ।

সন্তান জন্ম দেয়া স্কুল ছাত্রীর বড় বোন জানান, তার বোনের শারীরিক পরিবর্তন দেখে সন্দেহ হলে জানতে পারি সে ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তখন তার কাছ থেকে জানতে পারি একই গ্রামের রাজুর সাথে ওর শারীরিক সম্পর্কের কথা। এরপর রাজুকে ফোন দিলে সে শারীরিক সম্পর্কের কথা স্বীকার করে বলে ভুলে হয়ে গেছে আপা, বাচ্চা নষ্ট করে দেন সব খরচ আমি দিবো।

তিনি আরো জানান, এ নিয়ে প্রথমে এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দিলে অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হওয়ায় বাচ্চা নষ্ট করে দিয়ে দেড় লাখ টাকা জরিমানা দেওয়ার আশ্বাস দেন। এতে আমরা রাজি না হয়ে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাতিমা পারভীনের কাছে জানালে তিনি আমাদের আইনি সহায়তা পেতে থানায় নিয়ে যান।

এ বিষয়ে কাঠালতলী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম জানান, উভয় পক্ষের সমঝোতা বৈঠকে ছেলের বাবা আব্দুল জলিল দেড় লাখ টাকা মেয়েকে দেওয়ার প্রস্তাব দিলে মেয়ের পক্ষ তা মানতে রাজি হয়নি।

এসময়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বি এম আশরাফ উল্ল্যাহ তাহের বলেন, নিষ্পাপ শিশুটি যাতে তার পিতৃত্ব পরিচয় পায় সে লক্ষ্যে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পাথরঘাটা পুলিশ তদন্ত করে যাচ্ছে। প্রয়োজনে ডিএনএ টেস্টে করে দেখা হবে বলেও জানান তিনি।